অন্তর্দ্বন্দ্বে বন্ধের পথে অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজ

নিয়াজ মাহমুদ: গ্রাহকের অর্থ নিয়ে অনিয়ম ও দুই পক্ষের অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-১৩৭)। মার্জিন লোন বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে ব্রোকারেজ হাউজটিকে সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জরিমানা মওকুফের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর বুধবার চিঠি পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজটির বিরুদ্ধে আরও অনিয়ম চিহ্নিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুই সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে বলে বিএসইসির সূত্রে জানা গেছে।

অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায় ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাধব চন্দ্র দাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে রয়েছে। চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়াই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ চেয়ারম্যানের। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির মাসিক বা বার্ষিক কোনো আয় ব্যয়ের তথ্যও নেই চেয়ারম্যানের কাছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের মতো করে আয়-ব্যয় করছেন।

ব্রোকারেজ হাউজটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাধব চন্দ্র দাসের অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি বিএসইসি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির সমন্বিত কাস্টমার ব্যাংক হিসাবে তদন্তের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। গত বুধবার জরিমানা মওকুফের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান বরারবর একটি আবেদন পাঠিয়েছেন অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যা ওই দিনই কমিশন কার্যালয় গ্রহণ করেছে। তবে এ আবেদনের খবরও জানেন না প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায়।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার মুঠফোনে পঙ্কজ রায় শেয়ার বিজকে বলেন, এমডির অনিয়মের বিষয়ে রেগুলেটরি বডি জরিমানা করেছে। জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করেছে কি না-তা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো কিছুই এমডি আলোচনা করেননি। এমডিসহ অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের মালিকানায় আমরা তিনজন। কিন্তু কার্যক্রম চলে শুধু এমডির ইচ্ছ-অনিচ্ছায়। এর আগে মালিকানায় ছিল চারজন, এরমধ্যে হাইকোর্ট একজনকে মালিকানা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুনে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বোর্ড সভা চালিয়ে যাওয়ায় ওই সভাকে অবৈধ বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায়। তাই এ বিষয়ে হাইকোর্টে পিটিশন করায় পুরো প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে উচ্চ আদালত, যার মেয়াদ ছিল তিন মাস।

এরপর মাধব চন্দ্র দাস সব অফিসিয়াল নথিপত্র চেয়ে চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায়কে উদ্দেশ করে নোটিশ জারি করেন। এমনকি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার এড়িয়েই জারি করেন অফিস নোটিশ। যেখানে প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রমের প্রতিবেদন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাখিল করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এমনকি নথিপত্র জমা না দিলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোম্পানির চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো ধরনের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন না, পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। এমনকি ওই নোটিশে পরিচালকের পদ হারানো তপন কৃষ্ণ পোদ্দারকে পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করে নোটিশের কপি পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের এমন সংঘাতের ফলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার  আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

এদিকে বিএসইসির ৫৯৫তম কমিশন সভায় পরিচালক ও তাদের আত্মীয়দের প্রদত্ত বেআইনি ঋণ সম্পূর্ণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত অ্যালায়েন্স সিকিউরিটজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের পরিচালকদের সম্মানী প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া পরিচালকদের লভ্যাংশ, ঋণ বা অগ্রিম প্রদান, প্রশাসনিক ব্যয় এবং দৈনন্দিন কার্যনির্বাহ ছাড়া রিজার্ভ ব্যবহার, পরিচালক ও তাদের আত্মীয়দের মার্জিন ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

পরিচালক ও তাদের আত্মীয়দের শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ প্রদানে এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/৩১ লঙ্ঘন, ঋণ চুক্তি ব্যতিরেকে মার্জিন ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে মার্জিন রুলস লঙ্ঘন ও অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১৩৫ নির্দেশনা লঙ্ঘন করার কারণে অ্যালায়েন্স সিকিউরিটজকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

বিএসইসি জানায়, কোম্পানিটির পরিচালকরা নিজেদের এবং আত্মীয়দের শেয়ার কেনার জন্য বে-আইনিভাবে মোট ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে মার্জিন ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাধব চন্দ্র দাশ নিজে এবং তার মা, বাবা, স্ত্রী, ভাই, বোন, ভাগিনা, ভাতিজা, শ্যালক ও বোনকে ৮ কোটি ৭২ লাখ ২৬ হাজার টাকা মার্জিন ঋণ দিয়েছে।

অপর পরিচালক তপন কৃষ্ণ পোদ্দার ও তার বোনকে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৬ টাকা মার্জিন ঋণ দিয়েছেন। আদালত কোম্পানির পর্ষদের পরিচালক হিসেবে তপন পোদ্দারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আরেক পরিচালক পার্থ প্রতীম দাশ এবং তার ভাইকে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬২২ টাকা মার্জিন দিয়েছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায় নিজে এবং তার স্ত্রী ও বোনকে ১২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা মার্জিন ঋণ দিয়েছেন।

আত্মীয়দের প্রদত্ত মার্জিন ঋণ আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুদাসলে সমন্বয় করার জন্য অ্যালায়েন্স

সিকিউরিটজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টকে বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত কাস্টমার ব্যাংক হিসাবে তদন্ত পরিচালনার জন্য ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০