ক্রীড়া প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে হয়েছিল টেস্ট ক্যারিয়ারের গোড়াপত্তন। ২০০৮ সালের জুনে কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। শুরুটাও হয়েছিল বেশ মনে রাখার মতো। সে ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছিলেন ১৩৭। ক্যারিয়ারের বয়স ১০ বছর হতে চললো। এত দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলছেন মাত্র ৪৯টি টেস্ট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৭ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচসংখ্যার অর্ধশতকও হবে। এতদিন পর ৫০তম ম্যাচ খেললেও রোমাঞ্চটা মোটেও কম কাজ করছে না দেশসেরা এ ওপেনারের মধ্যে।
গতকাল চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তামিম বলেন, ‘দেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট খেলা অনেক বড় অর্জন। এক সময় যখন এক-দুবছরে ২-৩টি টেস্ট খেলতাম, মনে হতো ক্যারিয়ার শেষে ৫০ টেস্ট হবে তো! অবশেষে হচ্ছে। আশা করি ৫০তম টেস্ট স্মরণীয় হবে আমার জন্য, দলের জন্যও। তাহলেই মাইলফলকটা স্পেশাল হবে।’
তামিমের ব্যাটিং নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধাদের মধ্যে কখনই কোনো প্রশ্ন ছিল না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাধর এ ব্যাটসম্যান নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়েছেন যথাযথভাবেই। প্রশ্নটা ছিল ফিটনেস নিয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলেও বড় রান ৭০-৮০’র ঘরে ঢুকলেই কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠতেন। তাই প্রশ্নটা উঠতো স্বাভাবিকভাবেই। গত দুবছরে ফিটনেস সমস্যাটি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন বলা যায়। এর প্রমাণ মেলে তার পারফরম্যান্সেই। আগের সে ক্ষেপাটে ব্যাটসম্যানকেও এখন আর সচরাচর দেখা যায় না! দলের প্রয়োজনে যখন যা করা দরকার, তা-ই করেন তিনি। ফিটনেসের গুরুত্বটা ভালোই বোঝেন তামিম, ‘আমাদের দলে মুশফিক-সাব্বিরের মতো দু-একজন আছে, যারা সারা দিনই ফিটনেস নিয়ে ভাবে। ওদের মতো আমি হয়তো সারা দিন ফিটনেস নিয়ে থাকি না। তবে ফিটনেসকে যথেষ্ট সিরিয়াসলিই নিই। যতটুকু করি, যা করি, ভালোভাবেই করি। আমার অনেক কাজ সেভাবে দেখা যায় না। নিজেকে ফিট রাখতে ডায়েট, রানিং থেকে শুরু করে যতটুকু দরকার, সবই করি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুধু তামিমই ৫০তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন তা কিন্তু নয়। সাকিবেরও ওই ম্যাচটি হবে টেস্টে ৫০তম ম্যাচ। সাকিব ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তাই এ-বিষয়ে সাকিবের মুখ থেকে তার অনুভূতির কথা এখনই জানা সম্ভব না হলেও তার হয়ে কাজটি সেরেছেন তামিম। ‘আমার জন্য যতটা স্পেশাল, ওর জন্যও নিশ্চয়ই ততটা স্পেশাল হবে। আমি নিশ্চিত, তারও চাওয়া থাকবে যেন ওর পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ জিততে পারে। চাইবে ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। ৫০তম টেস্ট খেলছি বলেই যে দারুণ কিছু করতে হবে, তা নয়। দেশের হয়ে সব টেস্টেই আমরা ভালো করতে চাই। এবারও সর্বোচ্চটা দেব। যদি ভালো করতে পারি, তাহলে ভালো স্মৃতি থাকবে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পরিবারের বিষয়টি চলে আসায় ইংল্যান্ড থেকে হঠাৎ দেশে ফিরে আসার বিষয়টিও উঠে আসে তামিমের বক্তব্যে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের খবর ছিল ‘হেইট ক্রাইমের’ শিকার তামিম ইকবালের পরিবার। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামিম নিজেই জোর দিয়ে বলেছিলেন খবরটি ‘সত্য নয়’।
তারপরও গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তামিম। ‘দেখুন, যে ব্যাপারটা সত্যি নয়, সেটা যদি এভাবে পাবলিকলি ছড়ানো হয়, তাহলে তা খুব অন্যায়। আমার জন্য ঠিক নয়। যে দেশ থেকে এসেছি, সে দেশের জন্যও ঠিক নয়। ব্যক্তিগত কারণে চলে আসতে চাওয়ার পরও যে ক্লাবটি আমাকে সম্মান জানিয়েছে, সে ক্লাবের জন্যও ঠিক নয়।’
উল্লেখ্য, এসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলতে গত ৮ জুলাই ইংল্যান্ড যান তামিম। সেখানে ম্যাচ খেলার কথা ছিল ৯টি। কিন্তু ১ ম্যাচ খেলেই ১১ জুলাই ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এসেক্স অফিসিয়াল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তামিমের ‘প্রাইভেসি’ রক্ষা করতেও অনুরোধ করেছিল।
Add Comment