আমাদের পুঁজিবাজারের গভীরতা কম

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও তাদের খুব কমসংখ্যক শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে। অধিকাংশ শেয়ারই উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। ফলে তারা প্রতিবছর খুব ভালো মানের লভ্যাংশ দিলেও তাতে উদ্যোক্তারাই লাভবান হন। যদি এসব কোম্পানির আরও অধিক শেয়ার আমাদের দেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকত, তাহলে আমরা লাভবান হতে পারতাম। এছাড়া আমাদের বাজারের গভীরতা ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সেদিক বিবেচনায় দেশের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি ঘটানোর অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এসব বিষয় আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ মুসা এবং ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আনিসুর রহমান, এফসিএ।

মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনেকের ধারণা নির্বাচনের আগে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে বাজার বাড়াবে। সেদিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারের সূচকগুলোয় এর কোনো প্রতিফলন দেখছি না। এক বছর যাবৎ সবাই বলছিÑবাজার বাড়বে এবং কিছুটা বেড়েছেও। সূচক পাঁচ হাজার ২০০-৩০০ থেকে ছয় হাজার ২০০-৩০০ পয়েন্টে গেছে এবং তা সংগত ছিল। আর গত দু-মাস ধরে বাজার এক জায়গাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১৮ সাল অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য একটি অকর্ষণীয় বছর। রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। আর অর্থনীতিকে যদি বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে পুঁজিবাজারকেও গণনায় আনতে হবে।  ২০১৮ সালে রাজনীতির মাঠ একটু গরম থাকবে বলে মনে করি এবং কতটা গরম থাকবে, তার ওপর নির্ভর করবে পুঁজিবাজারের গতিবিধি। তবে সরকার চেষ্টা চালাবে বাজার ভালো জায়গায় রাখতে। কিন্তু জোর করে কোনো জিনিস বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত সরকার অনেক প্রণোদনাই দিয়েছে; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। তারা আসলে বোঝেই না কোন প্রণোদনা কাজ করবে আর কোনটা করবে না। বাজার তার নিজের গতিতেই চলে। ফলে ওই ধারণা মাথায় নিয়ে বেশি দামের শেয়ার সংগ্রহ করা যাবে না। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হতে হবে। কারণ বেশি দামের শেয়ারে ঝুঁকি বেশি।

মো. আনিসুর রহমান বলেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে থাকে। যেমন জিপির ৯০ শতাংশ শেয়ার আছে স্পন্সরদের হাতে। বাকি ১০ শতাংশের আট শতাংশের মতো আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে আছে মাত্র দুই শতাংশ। আমরা সবাই জানি, জিপি একটি ভালো কোম্পানি। তারা চাইবে কর্মদক্ষতা দেখিয়ে এবং আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়ে নিজেদের মুনাফায় রাখা। অন্যদিকে ব্যাটবিসির ৭৩ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তার হাতে। ফলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো চাইবে ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে সে টাকা নিজ দেশে নিয়ে যেতে। কারণ তারা পুনরায় বিনিয়োগ খুব একটা করছে না। আর অর্থ ফিরিয়ে নিতে হলে লভ্যাংশ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। কাজেই যদি তাদের ৫০ শতাংশ শেয়ার দেশের জনগণের হাতে থাকত, তাহলে আমরাও লাভবান হতাম। এছাড়া আমাদের বাজার গভীরতা ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সেদিক বিবেচনায় দেশের পুঁজিবাজারে প্রবৃদ্ধি ঘটানোর অনেক সুযোগ রয়ে গেছে।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০