অন্যায়ের প্রতিরোধে আশুরা শিক্ষণীয় হয়ে থাকুক

পবিত্র আশুরা আজ। আশুরা অর্থ ১০ তারিখ। ইসলামি পরিভাষায় হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আল্লাহ এদিন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন এবং প্রথম মানব আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এদিন নুহ (আ.)-এর প্লাবন সমাপ্ত হয়। এদিন ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ৪০ দিন পর নিরাপদে মুক্তি পান। এদিন ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এদিন আইয়ুব (আ.) রোগমুক্তি লাভ করেন। এদিনেই হারানো রাজত্ব ফিরে পান সুলাইমান (আ.)। এদিন ইয়াকুব (আ.) হারানো ছেলে ইউসুফ (আ.)-কে ৪০ বছর পর ফিরে পান।

এদিনে ঈসা (আ.) জš§গ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। এর বাইরেও এই মহিমাময় দিনে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে।

সৃষ্টির আদি থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আশুরার তাৎপর্য বিদ্যমান। তবে মুসলমানদের অনেকে দিবসটি পালন করেন মূলত কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে। উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া (রা.)-এর মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করা হয়। চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার ধারাবাহিকতায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ সঙ্গীসহ শাহাদাতবরণ করেন মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.)।

তাদের হত্যার ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠুর ও নির্মম পথ বেছে নেয়া হয়েছে, ইতিহাসে এ ধরনের উদাহরণ বিরল। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সংঘটিত এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে।
আশুরায় সব তাৎপর্যময় ঘটনা সংঘটিত হলেও এ তারিখে সংঘটিত হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পালিত হয় দিবসটি। কবি ফররুখ আহমদের ভাষায়, ‘জীবনের চেয়ে দীপ্ত মৃত্যু তখনই জানি, শহিদি রক্তে ভেসে ওঠে যাবে জিন্দেগানি।’ ইমাম হুসাইনের শাহাদাত বরণে যেন জীবনের চেয়ে মৃত্যু দীপ্ত হয়ে আছে। পরাজিত হলেও যুগে যুগে তিনি ন্যায়ের পথের অনুকরণীয় সংগ্রামী হিসেবেই জাগরূক থাকবেন।

মহররম মাস আসে প্রতি বছর ঘুরে, তাই আশুরাও আসে। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ফোরাততীরে কারবালা প্রান্তরে আত্মদান মূলত অসত্য, অসুন্দর, অন্যায় ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে অনন্তকালের জন্য সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের আদর্শিক বিজয়ের শিক্ষা। কারবালার শিক্ষা অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের শিক্ষা। মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং এ দিবস পালনে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা। তাই ইসলাম কোনো আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব ধর্ম নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০