Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:36 pm

অন্যায্য ডিসকাউন্ট রোধে অধিকতর সতর্কতাই কাম্য

 

‘অন্যায্য ডিসকাউন্টের কবলে পোশাক রপ্তানি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে। পোশাকপণ্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান খাত। এ খাতের অগ্রগতিতে রাষ্ট্র নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। অথচ সুযোগসন্ধানী কতিপয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নানা বাহানায় চুক্তির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দর কম দেয়া অর্থাৎ ডিসকাউন্টে নেয়ার অন্যায্য চর্চা করছে। যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, সে অনুযায়ী অর্থ দেশে না আনাসহ অর্থ পাচারের মতো গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়, তার একটি কারণ এই ডিসকাউন্ট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি মূল্যের এক হাজার ২০০ কোটি ডলার অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত হয়নি। এমন বাস্তবতায় ডিসকাউন্টের সুযোগসন্ধানী ক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, রপ্তানিতে ডিসকাউন্টের কারণে অর্থ সংকটে পড়ে সংশ্লিষ্ট কারখানা। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর কাঁচামাল আমদানিসহ পণ্য প্রস্তুতের প্রয়োজনীয় সব ব্যয় ব্যাংকঋণের মাধ্যমে করতে হয়। পণ্যমূল্য না পেলেও ব্যাংকঋণের দায় থাকে রপ্তানিকারকের ওপর। অর্থ সংকটে মজুরি পরিশোধ বিঘ্নিত হয়। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে এ কারণে।

রপ্তানিমূল্য দেশে না এলে সেটিকে ঢালাওভাবে অর্থপাচার বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক পক্ষ জড়িত থাকে এবং তাদের দায়ও কম নয়। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাদের ফাঁদে পড়ে অনেক পোশাক ব্যবসায়ী। পোশাক খাতকে রক্ষায় ব্যবসায়ীদের যেমন সতর্ক হতে হবে, তেমনি সরকারকেও অন্যায্য ডিসকাউন্ট চর্চা বন্ধে কঠোর হতে হবে শূন্য সহনশীলতায়।

তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণপত্রের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দেয় বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ নিয়মে রপ্তানিকারকেরা একধরনের আইনি সুরক্ষাও পেতেন। তবে কয়েক বছর ধরে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের বিপরীতে ঋণপত্র আসা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ঋণপত্রের বদলে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ক্রয়াদেশ দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে। উদ্যোক্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, খরচ কমাতে তৈরি পোশাকের বড় ব্র্যান্ড বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র দেয়া বন্ধ করেছে। তাতে বর্তমানে পোশাক খাতের তিন-চতুর্থাংশ ক্রয়াদেশ চুক্তির মাধ্যমে আসছে। ফলে রপ্তানিকারকদের আইনি সুরক্ষার জায়গাটি ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে; সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানির অর্থ দেশে আসার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।  এ পরিস্থিতিতে পোশাক মালিকদের কীভাবে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘অন্যায্য ডিসকাউন্টের দায় কেবল বিদেশি ক্রেতাদের ওপর চাপনোর সুযোগ নেই। পোশাক মালিকরা সংযত হলে বিড়ম্বনা এড়ানো সম্ভব। কেননা মুনাফার কথা বিবেচনা করে তারা নিজেরাই অন্যায্য ডিসকাউন্টে জড়িয়ে পড়েন, ক্ষতিগ্রস্ত হলেই সংগঠনের কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তা কামনা করেন। তাই নিজেদেরও সতর্ক থাকতে হবে। ক্রয়াদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে না এনে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যস্থতায় সম্পাদন করা হলে বিল অনাদায়ী থাকার আশঙ্কা কম।

বহু বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেও তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা দেয়। যেহেতু ছোট ক্রেতা ও তুলনামূলক ক্ষুদ্র ও মাঝারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চুক্তির বিপরীতে পোশাক রপ্তানিতে জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। অপরিচিত ভুঁইফোঁড় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ নেয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অধিকতর সতর্কতাই কাম্য।