নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াত ও সরকারবিরোধীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা আসলে কী, অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের? তিনি বলেন, আমাদের কিছু মানুষ বিদেশে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে ব্যস্ত, তারা সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক লীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল তখন আমাদের কিছু কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ব্যস্ত, সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। খুব ভালো কথা! তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে।
তিনি বলেন, একটি কথা আমি বলতে চাই, আমি প্রায় সময় বক্তৃতায় শুনি আমাদের দেশের কিছু নেতা আছে, দুঃসময়ে মানুষের পাশে কতটুকু দাঁড়িয়েছে সেটা জানি না, করোনার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করেছে কি না সেটারও কোনো লক্ষণ আমরা দেখিনি, তবে তারা খুব আন্দোলনের জন্য ব্যস্ত। এই সরকারকে হটাতে হবে, কোন সরকার? আওয়ামী লীগ সরকার। এখানে বিএনপি-জামায়াত জোট আছে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমাদের মান্না সাহেব এবং ড. কামাল হোসেনসহ তাদের একটি গ্রুপ। আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং আমাদের বাম দল, বাসদ-টাসদ আরও কারা কারা। তারা সবাই এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকার হটাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমার প্রশ্ন অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের? আমরা যে সরকারে এসেছি ২০০৮-এর নির্বাচনে, যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা রূপকল্প-২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা সরকারে এসেছি। আমরা নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জš§শতবার্ষিকী উদযাপন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি আমরা। সেই সময়ে আমরা কী অর্জন করেছি? বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রশ্নÑএটা কি তাদের ভালো লাগেনি? সেই জন্য কি তারা বাংলাদেশকে, মানে এই সরকারকে হটাতে চায়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি। ভূমিহীনদের মাঝে যে কর্মসূচি জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছি, জমি দিচ্ছি এবং তা বিনামূল্যে।
তিনি বলেন, এই যে একটা মানুষ একটা ঘর পাওয়ার পর তার জীবন-জীবিকার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেÑএটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এ জন্যই কি এই সরকারকে হটাতে হবে? ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি। বেসরকারি ব্যাংক আমরা উম্মুক্ত করে দিয়েছি এবং তাদের ওপর শর্ত আছে যে প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত তাদের শাখা থাকতে হবে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংক আছেই। আজ ১০ টাকায় কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার ভর্তুকির টাকাটা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সারের দাম আমরা কমিয়েছি ৪ দফা। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলামÑকারও টাকা লাগবে না, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব।
পায়রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে টাকার সাশ্রয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করে এত বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজন কী? শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে তো আমাদের উৎপাদন করতেই হবে। আমরা সেখানে যে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম এই কথাটা তো কেউ বলেন না। এটা বলতে বোধহয় তাদের একটু কষ্টই হয়। যে একটা প্রজেক্টে টাকা আরও বেশি লাগবে, সেখানে টাকা আরও সাশ্রয় হয়, সময় বাঁচাবে, এটা বোধহয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ নয়, তারা সেটাই চাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজকে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। করোনার সময়েও আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরও বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি।