অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া জরুরি

জাতীয় সংসদে কোনো অপরাধমূলক আইন পাস করানোর পর সরকার কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন ওই আইন সম্পর্কে বিস্তারিত গণমাধ্যমে প্রকাশ করে সাধারণ জনগণকে অবগত করা। দেশের অধিকাংশ অপরাধী আইন ও শাস্তির বিধান সম্পর্কে না জেনেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। দেশের সাধারণ নাগরিকদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

অপরাধমূলক আইন পরিচালনার কিছু নিয়ম

এক. দেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আইন রয়েছে এবং তার শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের এ সম্পর্কে সাধারণ ধারণাটুকু নেই। তাই শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া; দুই. আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড ও জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধানে গরিব অপরাধীরা আটকে গেলেও। ধনী অপরাধীরা জরিমানা দিয়ে শাস্তি থেকে রেহাই পায়। কিছুদিন পর সে একই অপরাধ করতে দ্বিধা করে না; তিন. বেশিরভাগ অপরাধী অশিক্ষিত। তাদের সরকারি কর্মকর্তা বা সরকারি আইনজীবীদের মাধ্যমে অপরাধ ও অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া জরুরি; চার. শাস্তি হিসেবে জরিমানার বিধানটা না রাখাই ভালো। এতে গরিব-ধনী সব অপরাধীই। নিজের কর্তৃক গঠিত অপরাধের শাস্তি সমানভাবে ভোগ করবে। অপরাধ করার মাত্র কমবে; পাঁচ. যে কোনো অপরাধের সঠিক তদন্তসাপেক্ষে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধ চিহ্নিত হলে অপরাধীকে সঠিক শাস্তির সম্মুখীন করা জরুরি; ছয়. দেশের নাগরিকরা আইন না জানার কারণে ভিকটিম ও আসামি উভয়পক্ষ আইনজীবীদের আশ্রয় নিতে হয়। এতে আইনজীবীদের খরচ ভিকটিম কোনো অপরাধ না করেই বহন করতে হয়। ভিকটিমের জন্য সরকারপক্ষের অভিজ্ঞ আইনজীবী রাখা জরুরি। এতে তদন্তসহ আসামি চিহ্নিত করা ও বিচারকার্য পরিচালনা করা সহজ হয়; সাত. চৌকস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মামলা তদন্ত করতে হবে। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে আসামিকে চিহ্নিত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘুষ অথবা টাকার বিনিময়ে আসামিকে সাপোর্ট না করে। এতে একটি অপরাধের ওপর অন্য একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; আট. একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার কার্যের মাধ্যমে ওই অপরাধের বিচারকার্য পরিচালনা করতে হবে। বিচার কার্য পরিচালনা বা তার পরবর্তী সময়ে মামলার সাক্ষীসহ ভিকটিমের নিরাপত্তার দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকেই বহন করতে হবে। অভিজ্ঞ আইনজীবী ও নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ভিকটিমকে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে, নয়. অপরাধীর শাস্তি চলাকালীন বা আসামির সাজা ভোগ করার পর। কোনো মতেই আসামি বা আসামি পক্ষ দ্বারা ভিকটিম ও ঘটনার সাক্ষী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরুরি।  আসামি সাজা ভোগ করে বের হওয়ার আগে আসামিকে শর্ত দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো অপরাধে যেন না জড়ায় বা ওই একই অপরাধ না করে। আসামির সাজা চলাকালীন খেয়াল রাখতে হবে, তার পরিবার কোনোভাবেই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

দেশে বিভিন্ন অপরাধের জন্য আইন ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব আইন না জানা ও এর শাস্তি সম্পর্কে না জানা অনেকেই অপরাধে জড়ায়। আইন থাকলেও আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই বললেই চলে, তাই অপরাধীরা বারবার একই অপরাধ করে বেড়ায়। এতে অপরাধ কমবার বদলে উল্টো বেড়েই চলছে।

আইন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সব অপরাধকারীই আসামি। তাদের অপরাধ তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতাধীন শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমবে।

বিশেষ করে অপরাধমূলক আইনে জরিমানার বিধান না রাখাটাই সমীচীন। এতে ধনী-গরিব যেইবা অপরাধ করবে। তদন্ত সাপেক্ষে তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। আর অপরাধমূলক শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডই যথেষ্ট।

মোহাম্মদ ইমরান স্বপন

মুক্ত লেখক 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০