নিজস্ব প্রতিবেদক:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, অপরিকল্পিত কারখানার কারণে গ্যাস সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। প্রতিদিন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি, আবার প্রতিদিন নিচ্ছে। একটা কূপ খনন করতে ৯-২৫ মিলিয়ন ডলার লাগে। তারপর আপনি গ্যাস নাও পেতে পারেন। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস আনার চেষ্টা করছি। ওখানে পাইপলাইন নেই। চেষ্টা করছি অন্তত সিএনজি করে যাতে আনা যায়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি: টুওয়ার্ডস আ প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে আমদানিযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ হবে চার থেকে সাড়ে চার হাজার ঘনফুট। ২০৩০ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ঘনফুটে। গত ১৩ বছরে গ্যাসের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। অন্তত ৩০০ কারখানা গ্যাস সংযোগ চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আট হাজার ঘনফুট গ্যাস আনলেও কাভার হবে না। ৭০০ থেকে ৮০০ ঘনফুট গ্যাস আমদানি করতে চার বিলিয়ন ডলার লাগবে। এই টাকাও একটা বড় অঙ্ক। টাকাটা কীভাবে আসবে, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গ্যাস কীভাবে বাড়াতে পারি, তা নিয়ে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন ইকোনমিক জোনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করে যাচ্ছি। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের লক্ষ্য ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই চ্যালেঞ্জিং বাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এতে বড় ভূমিকা রাখবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআইর সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার। তিনি বলেন, অস্থিতিশীল বৈশ্বিক ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা অন্যতম পূর্বশর্ত। তিনি আরও বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক জ্বালানি উৎসে আমাদের আরও বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলোর সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, কভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে জ্বালানি প্রাপ্তিতে স্বল্পতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সরকারকে আরও কৌশলী হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, আমাদের জল ও স্থলসীমায় গ্যাস প্রাপ্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে অনুসন্ধানে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্প খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহƒত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ফয়সাল করিম খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান প্রমুখ।