অপরূপ বান্দরবান

বান্দরবান। একসময় এখানের পথে-ঘাটে বানরের জ্বালায় অতিষ্ঠ ছিল বসবাসকারীরা। অবশ্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বলে জানা যায়। শুধু ভ্রমণপিপাসুদের চিত্তাকর্ষণীয় স্থানই নয়, এখানে রয়েছে জ্ঞানার্জনের নানা মত ও পথ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজার থেকে সরাসরি বাসযোগে বান্দরবানে আসা-যাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্প্রতি জেলাটি ঘুরে ধারণা হয়েছে যে, প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সবই আছে এ জনপদে। শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটিকে বিশ্বের পরিমণ্ডলে আরও বেশি প্রচার-প্রসার ও আকর্ষণীয় করা গেলে এ থেকে দেশ কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে বলা রয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচু পাহাড় এ জনপদকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গীয় ভূমিতে পরিণত করেছে। দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের ওপর
থানচি-আলীকদম সড়কের মাঝপথে অবস্থিত ডিমপাহাড় এলাকাটি জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। কারণ পুরো ৩৩ কিলোমিটার সড়কপথজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। রকমারি ফুল ও ফলে আচ্ছাদিত আর নানা নামের সবুজ গাছগাছালিতে ঠাঁসা এই সড়কপথ। পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে এসব দৃশ্য দেখে ভ্রমণপিপাসুর মনের ভেতরে স্পন্দন জেগে না উঠে পারে না। পুরো সড়কপথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সবুজ পাহাড় আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছোট ছোট পাড়া। চোখে পড়ে বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবনধারা ও পথচলা। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এখনও বিপদমুক্ত নয়।
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে পৃথক স্থানে স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকিগুলোয় যাতায়াতকারী পর্যটকসহ যাত্রী বহনকারী যানগুলোর চালক ও যাত্রীদের জরুরি মোবাইল ফোন নম্বরসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যাবে এতে। পর্যটকরা যেন সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে আলীকদম-থানচি সড়কপথে যাওয়ার সময় লামা উপজেলার টপহিল মিরিঞ্চা পর্যটনকেন্দ্র ও আলীকদম উপজেলা সদরের কাছে পর্যটনকেন্দ্র আলী ছড়ংগ দর্শনের সুযোগ মেলে। জেলা সদর হয়ে থানচি-আলীকদম সড়কপথ ভ্রমণে গেলে দর্শনীয় স্থান প্রান্তিক লেক, রাজবাড়ী, চিম্বুক পাহাড়, জিয়া পুকুর ও জীবননগর অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। যে কোনো গাড়িতে চড়ে সরাসরি নীলগিরিতে যাওয়া যায়। একইভাবে যাওয়া যায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, জীবননগর পাহাড়, মিরিঞ্চা, আলী সুড়ঙ্গ, শুভ্র নীল ও তাজিংডং বিজয়ে। ক্যামলং জলাশয়টি জেলা শহর থেকে পাঁচ কিমি দূরে। রিকশা, ইজিবাইকসহ সব ধরনের যানবাহনযোগে এখানে যাওয়া যায়। আরও রয়েছে উপবন লেক, কানাপাড়া পাহাড়, বৌদ্ধ ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির) প্রভৃতি।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। এটি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার মন্দিরগুলোর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তিটি এখানে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি হলো ‘বুদ্ধ ধাতু জাদি’। এছাড়া শহরের মধ্যে রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার ও উজানীপাড়ার বিহার। শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতিদের গ্রাম। প্রান্তিক হ্রদ, জীবননগর ও কিয়াচলং হ্রদসহ আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান রয়েছে। মেঘলা সাফারি পার্কে রয়েছে দুটি ঝুলন্ত সেতু। সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ করে ভ্রমণপিয়াসীরা মনোহর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। বান্দরবান শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শৈলপ্রপাত একটি আকর্ষণীয় পাহাড়ি ঝরনা।
বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং ও বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং বান্দরবানেই অবস্থিত। মৌসুমগুলোয় এ দুটি পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের জন্য পর্যটকদের ভিড় জমে। পর্যটকরা সাধারণত বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডংয়ে যান। অনেকে আছেন যারা কেওক্রাডং না গিয়ে বগা লেক থেকে ফিরে আসেন। এ হ্রদটিও বিশেষ দর্শনীয় স্থান। হ্রদসন্নিহিত এলাকায় বম উপজাতিরা বাস করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এখন পর্যটকদের ভ্রমণ মৌসুম না হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিনই বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিন বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটে।

আকাশ মো. জসিম

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০