সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিল্পগ্রুপ স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন বিএম কনটেইনার ডিপোতে গত ৪ জুন রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনার পর ডিপোটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় ৪৯ জন মারা যায়। এতে বিভিন্ন ধরনের ৩৮২ টিইইউএস মালামাল পুড়ে যায়। পাশাপাশি ডিপোর একাধিক শেড ও ভারী যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় আপাতত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে শেড নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগতে পারে অপারেশনে আসতে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রসারিত ইয়ার্ড সুবিধার অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চট্টগ্রামের মোট ১৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো পরিচালনার অনুমোদন দেয়। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে বছরে প্রায় ১৮ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। এর মধ্যে ১০০ ভাগ রপ্তানি পণ্য ও ৩৭ রকমের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারাইজড কার্গো থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের কাজ করছে। গত ২০১১ সালে স্মার্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ডাচ নাগরিক বার্ট প্রঙ্ক কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং বাঁশখালীর ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মালিকানাধীন ডিপোতে গত ৪ জুন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ৪৯ জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়। পাশাপাশি ডিপোর একাধিক শেড ও ভারী যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়।
ডিপো কর্মকর্তারা জানান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় রপ্তানির জন্য বিএম ডিপোর ইয়ার্ডে থাকা ৩৭টি রাসায়নিক কনটেইনারের মধ্যে ২০টি শিপিং কোম্পানি ‘মায়ের্কস লাইনের’। বাকি ১৭টি ‘ওয়ান লাইনের’। মূলত ভিয়েতনামের এ রাসায়নিক পদার্থ নিতে না চাওয়ায় শিপিং কোম্পানি মায়ের্কস লাইন জাহাজের বুকিং বাতিল করে। ফলে ৩৭টি কনটেইনারভর্তি ৮৫০ টন রাসায়নিক বন্দরে না গিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে ডিপোর ইয়ার্ডে পড়ে ছিল। এসব পণ্যের রপ্তানিকারক আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সেগুলো বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে পুনরায় নিজেদের কারখানায় ফেরত নেয়নি। কারণ রপ্তানির জন্য আনা পণ্য একবার ডিপোতে ঢুকলে তা ফেরত নিতে কাস্টমসের অনুমতির প্রয়োজন। সেই অনুমতি পাওয়ার আগেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ডিপোর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছর ধরে বিএম ডিপো থেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানি করে। গত এপ্রিল মাসে কম্বোডিয়ায় রপ্তানিকৃত একটি কনটেইনারের ধোঁয়া উঠলে তারা বাকি পণ্য নেয়নি। গত ৪ জুনের আগুনে ২৫ কনটেইনার পুড়ে গেছে। মূলত ডেনিম পণ্য ওয়াশ করার জন্য এ রাসায়নিক ব্যবহƒত হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো (অফডক) মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন বলেন, বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর নিরাপত্তা সংকটে নেই। বিএম ডিপোর ঘটনা ছিল একটি দুর্ঘটনা। আর একটি ডিপো তো রাতারাতি হয় না। এটি বন্ধ থাকলে সব ডিপোর ওপর চাপ তৈরি হবে। এ মূহূর্তে চাপ নেয়ার মতো ডিপোগুলোর পরিস্থিতি নেই। এতে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং স্লো হবে।
এ বিষয়ে স্মাট গ্রুপের মুখপাত্র ও সাবেক ডিআইজি (প্রিজন) শামসুল হায়দার সিদ্দিকি বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। যা তদন্ত হচ্ছে। এখন ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ। ডিপোর যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ঠিকঠাক করে আসতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র নেয়া, নতুন শেড নির্মাণ, নতুন যন্তপাতি সংগ্রহ ও নতুন অফিস বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে। তারপর অপারেশন শুরু হবে।
উল্লেখ, চট্টগ্রাম বন্দরের গত ২০২১ সালে মোট ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছিল। এর মধ্যে দেশের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো বছরের প্রায় ১৮ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। এর মধ্যে স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন বিএম কনটেইনার ডিপো বছরের প্রায় চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে।