অপ্রয়োজনীয় রেন্টাল ও আইপিপি বন্ধ করুন

‘লোকসান-ভর্তুকির পার্থক্য বাড়ছে: রেন্টাল-আইপিপির বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণেই যাচ্ছে ভর্তুকি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। তথ্যমতে, পিডিবির নিজস্ব ও সরকারি অন্যান্য কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি ব্যয় মেটাতে ভর্তুকি মিলছে না। এজন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে বলে উন্নয়ন সহযোগী আইএমএফকে জানানো হয়েছে। তিন বছর ধরে দ্রুত বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। দাম বাড়িয়েও আয়-ব্যয়ের বড় ঘাটতি পোষানো যাচ্ছে না। এতে লোকসান বাড়ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। তবে সে ঘাটতির পুরোটা ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। শুধু বেসরকারি খাতের রেন্টাল ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) থেকে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কেনার ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য খাতে পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না ভর্তুকি। এতে লোকসান ও ভর্তুকির মধ্যে পার্থক্য বাড়ছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রেন্টাল ও আইপিপির বিদ্যুতের দামের পার্থক্যের পুরোটা ভর্তুকি হিসেবে পাচ্ছে পিডিবি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, আর্থিক খরচ (সুদের হার) বৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের জন্য পিডিবির নিজস্ব ও সরকারি অন্যান্য কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রয়োজন। এমনকি বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল ও ছয় শতাংশ অগ্রিম আয়করের অর্থও ভর্তুকি ছাড়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে, এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এটি বিদ্যুৎ খাতে আমাদের সাফল্যকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) ও আইপিপির (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) জন্য সরকারের বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পরামর্শ আমলে তো নেয়াই হচ্ছে না, বরং নতুন করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে যখন উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আইএমএফ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে, তখন পিডিবির লোকসান নিঃসন্দেহে হতাশার।

২০২২ সালেও আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। তখন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন ছিলÑবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, সেটি ২০৩০ সালে শেষ হবে কি না? তখন পিডিবি বলেছে, ‘সেটি সম্ভব নয়, কারণ নতুন বেশকিছু আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) আসছে। সেগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।

ওই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি দেখিয়েছেন, বেসরকারি, দেশীয় ও বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। 

যেসব কেন্দ্র জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না (অলস বসে থাকছে), কেন এগুলোর ভাড়া দিতে হবেÑএ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে নীতিনির্ধারকদের। নানা কারণে দেশে অনিশ্চিত পরিস্থিতির কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন প্রতিকূল অবস্থায়ও পিডিবি লোকসান দিলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। তাই অপ্রয়োজনীয় রেন্টাল ও আইপিপিগুলো শিগগির বন্ধ করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০