অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধে উদ্যোগ নিন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো দেশে সিজারিয়ান বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মের গ্রহণযোগ্য হার হচ্ছে ১০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। এটি সরকারি হিসাব। প্রকৃত অর্থে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জšে§র এ হার আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। আবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যেসব শিশুর জš§ হচ্ছে তাদের প্রায় ৮৪ শতাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোয়। এ পরিসংখ্যান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমন অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘যুক্তরাজ্য ও চীনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা: সিজারে জš§ নেয়া শিশুর শরীরে হামের টিকা কম কার্যকর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, স্বাভাবিকভাবে জš§ নেয়া শিশুদের তুলনায় সিজার অপারেশনে জš§ নেয়া শিশুদের শরীরে হামের টিকা সম্পূর্ণ অকার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি। টিকা অকার্যকর হওয়ার মানে হলো প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণের পরও শিশুর রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা হামের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করতে না পারা। তাই শিশুরা এই রোগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল থাকে। তবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা সিজার অপারেশনে জš§ নেয়া শিশুদের শরীরে হামের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে।

শিশুর শরীরে কোনো টিকা প্রয়োগ করা হলে সেটি যদি অকার্যকর হয়ে যায়, তাহলে সেই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন শিশুর মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ-সবল জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো সামান্য কিছু অর্থের লোভে একজন শিশু ও তার মায়ের পুরো জীবনকে সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এসব হাসপাতালে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধ করা আবশ্যক।

দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে রোগীর অনুপাত অনুযায়ী চিকিৎসক ও সেবাদানকারী নেই। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া ডাক্তারের সন্ধানও মেলে এসব হাসপাতালে। আর অস্ত্রোপচারের জন্য দক্ষ অ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তারের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালেই অ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার নেই। ফলে অস্ত্রোপচারের পর অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হওয়া বা নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কাজেই স্বাস্থ্যসেবা খাতের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করা অত্যাবশ্যক। সারাবিশ্বে যেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জšে§র হার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো, সেখানে বাংলাদেশে কী কারণে এ হার ৪৫ শতাংশ হবে, তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০