নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও ক্ষমতায়িত করতে পারে কিশোরীদের। তবে কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশ ও আশপাশের উদাহরণ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল ‘স্কিলস দ্যাট ইমপাওয়ার: মেজারিং চেঞ্জ ইন দ্য কনটেক্স অব ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন আমেরিকার পপুলেশন কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট সাজেদা আমিন। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
সাজেদা আমিন বলেন, বাল্যবিয়ে এ দেশের কিশোরীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কেননা এর ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। নিজেদের স্বাধীনতা বলতে তেমন কিছুই থাকে না। এছাড়া শিশুশ্রমসহ আরও নানা বাধার কারণে তাদের বিকাশ ঘটে নাÑএ অবস্থায় আমরা দেশের তিনটি জেলায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করেছি। সেখানে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে প্রকল্প শুরুর আগে কী অবস্থা ছিল, আর প্রকল্প শেষ দিকে কী ফলাফল এসেছে। সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গ্রামের কিশোরীদের বিভিন্ন রকম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন তাদের সচেতন করে তোলা, জেন্ডার সমতা বিষয়ে জ্ঞান দেয়া এবং তাদের জীবনভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত শিক্ষা দেয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রেসার মাপা, মোবাইল সার্ভিসিং, খেলাধুলা, গান-বাজনা শেখানো ইত্যাদি। দেখা যায়, এসব শিক্ষার ফলে মেয়েরা নিজেদের গ্রামে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। যেটি আমরা প্রকল্প থেকে তাদের বলিনি। কোনো গ্রামে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। এসব করতে গিয়ে গবেষণায় অংশ নেয়া কিশোরীদের ৩১ শতাংশের ক্ষমতায়ন হয়েছে বলে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে কিশোরীরা যদি শিক্ষিত হয় তাহলে তারা তাদের বাবা-মায়ের মনোভাব পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামে যদি কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে, তাহলে সে মেন্টর হিসেবে কাজ করে। তখন অন্য মেয়েরা মনে করে তিনি তো পড়ছেন কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে আমরাও পড়ব। এভাবে তাদের মধ্যে একটা সাহসের সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রকল্পটি ২ বছর পরিচালনার পর কিশোরীদের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত সমাজের ৩৭ শতাংশ মানুষের।
তিনি আরও বলেন, কিশোরীদের ক্ষমতায়িত করার ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা, সামাজে অংশগহণ, স্বাধীন পারিবারিক পরিবেশ, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, পরিবার ও সমাজে কম বৈষম্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ফর লাইফস্কিল ইনকাম অ্যান্ড নলেজ ফর অ্যাডোলোশেনস (বালিকা)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৯ হাজার কিশোরীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এটি পরিচালনা করা হয়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে ড. বিনায়ক সেন বলেন, গবেষণা থেকে যা বোঝা গেল তা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা যেমন গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটিং কিশোরীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়ন করতে পারে। এ গবেষণায় তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রথমত শিক্ষা, জেন্ডার এবং জীবনাচরণ। কিশোরীদের ক্ষতায়নে এনজিও, পাঠাগার, খেলার মাঠ, বাড়ির বাড়ি, বাজার ও ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলা ও সমাজের বিভিন্ন ইস্যুতে অংশগ্রহণ কাজে লাগে। এছাড়া সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার শিক্ষাও কিশোরীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।