ক্রীড়া প্রতিবেদক: গল টেস্টের বড় হারের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দলটির সামনে হাজির শততম টেস্ট। আজ কলম্বোর পি সারা ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মাঠে গড়াবে বল। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল নাইন ও টেন ক্রিকেট।
শততম টেস্ট বলে কথা। এরই মধ্যে সবার মনে এই ম্যাচ ছুঁয়েছে অন্যভাবে। যে যার জায়গা থেকে নিশ্চয় চেষ্টা করবেন কীভাবে এই টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখা যায়; যা ম্যাচ শুরুর আগেই টাইগারদের কণ্ঠে বেশ কয়েকবার শোভা পেয়েছে।
তবে আজ কলম্বোর যে মাঠে নামছে বাংলাদেশ, সেই পি সারা ওভাল কিন্তু মোটেও কথা বলছে না সফরকারীদের হয়ে। এখানে আগের তিন ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে লাল-সবুজরা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মাঠে ইনিংস হারের ঘটনা এ তিনটিই! এ মাঠে ২৫.২ ওভারে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। মোট ছয় ইনিংসের মধ্যে কেবল একবার ২০০ ছাড়ানো ইনিংস পায় দল। ২০০৭ সালে এখানে বাংলাদেশ তাদের সর্বশেষ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৯ রান করেছিল, যা কেবল অনুপ্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৯৯ টেস্টের মধ্যে আটটি ম্যাচ জিতলেও হেরেছে ৭৬টিতে। ড্র মাত্র ১৫টি। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ম্যাচে পরাজয় দেখেছে। এত বেশি পরাজয় আর কারও নেই। জিম্বাবুয়ে জিতেছে ১১টিতে আর হেরেছে ৬২টিতে। ড্র করেছে ২৬টি টেস্ট। শততম টেস্টের ৫০-এর বেশি পরাজয়ের দেখা পেয়েছে আরও একটি দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা হেরেছে ৫১টিতে।
শততম টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা তাদের এই মাইলফলকে পৌঁছার সময় জিতেছিল ১৮টি টেস্ট। হেরেছে ৩৯টি। ড্র করেছে ৪২টিতে। সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। ৩৭টিতে পরাজয় এবং ড্র ছিল ১৭টিতে।
তবে বাংলাদেশ দল অতীত ভুলে এবার নতুন করে শুরু করছে। শততম টেস্টে ভালো কিছু করতে চাইছেন তারা। এরই মধ্যে সফরকারী দলের বোলিং কোচের কণ্ঠে শোনা গেছে সেই কথা, ‘শততম টেস্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় একটা ঘটনা, বড় অর্জন। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। সবচেয়ে বড় কথা, এটা একটা মাইলফলক। এই টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখার চিন্তা আমাদের মাথায়ও আছে। সে কারণেই আগে আমরা চেষ্টা করছি কন্ডিশনের সঙ্গে উপযোগী একাদশ সাজাতে। আমরা চেষ্টা করবো পি সারা স্টেডিয়ামের উইকেটের সঙ্গে মিল রেখে টিম কম্বিনেশন গড়তে।’
এদিকে বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচটাকে স্মরণীয় করতে চায় শ্রীলঙ্কাও। তাদেরও রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। বোর্ডপ্রধান থিলাঙ্গা সামাথিপালা সংবাদমাধ্যমকে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, শততম ম্যাচ খেলা দুই দলের ক্রিকেটারদের দেওয়া হবে ‘বিশেষ’ পদক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু দেশ। তারা আমাদের দেশে শততম টেস্ট খেলবে। এমন একটি ম্যাচ আয়োজন করতে পেরে খুবই খুশি আমরা।’
শততম টেস্টটি দেখতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি দল থাকবে পি সারা স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে দুই দেশের বোর্ডপ্রধানের সামনে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সেখানেই দুই দলের মেডেল দেওয়া হবে। ম্যাচ উদযাপন করতে দলের জন্য একটি ডিনারের আয়োজনও করা হবে।
এই ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও আছে বেশকিছু পরিকল্পনা। জানা গেছে, প্রতিটি ক্রিকেটারকে ম্যাচ শুরুর আগে দেওয়া হবে বিশেষ ক্যাপ ও স্মারক ক্রেস্ট। সব মিলিয়ে এ ম্যাচে অন্তত ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক অনুসঙ্গ পাবেন মুশফিকরা। এদিকে মুমিনুল নাও খেলতে পারেন শততম টেস্টে। তার জায়গা নিতে পারেন সাব্বির রহমান। এছাড়া শুভাশিষের জায়গা নিতে পারেন স্পিনার তাইজুল। বাদ পড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তার জায়গায় খেলার সম্ভাবনা রয়েছে ইমরুল কায়েসের।
শততম টেস্টে মাঠে নামার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলে থাকা না থাকা নিয়ে যে কাণ্ড হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে টাইগার শিবিরে। এছাড়া গল টেস্টের হারের দুস্মৃতি তো রয়েছেই। সব বিবেচনায় কিছুটা মানসিক চাপ নিয়েই আজ পি সারা স্টেডিয়ামে নামছেন মুশফিকরা। যদিও এগুলো মাঠে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই বিশ্বাস হাথুরুসিংহের শিষ্যদের।