নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। আর চট্টগ্রামকে ব্যবসাবান্ধব শহরে রূপান্তরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে, কর্ণফুলীতে টানেল নির্মিত হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। অথচ ব্যবসার জন্য ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা বা আইপি ইস্যুর ব্যাপারে হেড অফিসের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এছাড়া পরিকল্পিত শহর গড়ে ওঠেনি, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্প্রসারিত হয়নি, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এক্সেল লোড কম, নৌ-বন্দর সৃষ্টির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন সুযোগ নেই। এসব কারণে চট্টগ্রামের সম্ভাবনা পুরোপুরি বিকাশিত হয়নি।
চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে গতকাল বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এ সময় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ ও এস এম আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলী হুসেইন, বিএসএম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী ও জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম, চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মো. শাহরিয়ার জাহান, সাকিফ আহমেদ সালাম, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এস এম তাহসিন জোনায়েদ ও মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ডা. মুনাল মাহবুব, এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী, মো. শাহাবুদ্দিন ও ড. যশোদা জীবন দেবনাথসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কাঁচামাল ও ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের যৌক্তিক পার্থক্য নিশ্চিত করা, লোকাল এলসির ক্ষেত্রে উৎসে কর প্রত্যাহার, আগামী ৬ মাসে সম্ভাব্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদা প্রাক্কলন করে আমদানি, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয় করা, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না করা, ডলারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অগ্রিম কর ফেরত প্রদান, ইকোনমিক জোনে ভূমির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার ব্যাপারে সহায়তা প্রদান, বে-টার্মিনাল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক সম্প্রসারণ, নৌ-বন্দর সৃষ্টির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি, ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে কোয়ারেন্টাইন আইপি নবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে এফবিসিসিআই সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বিগত দুই বছরে কভিড চলাকালীন এবং বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাহিদা ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সম্পূর্ণ সাপ্লাই চেইন এবং ক্যাপাসিটি কমে গেছে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারণের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনপূর্বক বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করা উচিত। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলে দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেত। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নত রাষ্ট্রে বাংলাদেশকে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ইউটিলিটিজ নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। শুধু উন্নয়ন নয়, টেকসই উন্নয়নের জন্য সবার একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা আয়কর দিচ্ছে শুধু তাদের ওপর না চাপিয়ে করের আওতা বাড়ানো দরকার। গ্রামীণ অর্থনীতি বর্তমানে অনেক শক্তিশালী। তাই উপজেলা পর্যায়েও রাজস্ব আহরণ করা যেতে পারে। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যাবলি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিতপূর্বক দ্রুত সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই চট্টগ্রামকে ঘিরে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা সময়মতো সম্পন্ন করা হলে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে যুগান্তরকারী পরিবর্তন হবে, যা এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সরকারের দপ্তরগুলোর আরও বেশি ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। বেশির ভাগ চেম্বারেরই আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই চেম্বারগুলোকে করের আওতামুক্ত রাখা উচিত। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের মাধ্যমে ১৩ টনের বেশি মালামাল বহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমেই দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় এবং চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা দরকার।