নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত গতকাল পুরান ?ঢাকার ওয়ারী অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যা টানা ২১ দিন চলবে। ভোর ৬টায় ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন শুরু হয় ওয়ারীর নির্দিষ্ট এলাকাগুলো। যদিও এলাকাটির অধিবাসীরা নানা অজুহাতে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তাদের বচসাও হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল ২১টি রাস্তার মুখে বাঁশের ব্যারিকেড বসিয়ে সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু দুটি প্রবেশপথ খোলা রাখা হয়েছে, যেখানে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর ছাউনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪১ নং ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত টিপু সুলতান রোড, লারমিনি স্ট্রিট, জাহাঙ্গীর রোড, ওয়্যার স্ট্রিট, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, হেয়ার স্ট্রিট, জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন, র?্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট এলাকায় ২৫ জুলাই পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে। এসব এলাকায় ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান-পাট, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
লকডাউন এলাকায় ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল থেকে কয়েক দফা সেনা সদস্যের টহল টিমও এলাকা ঘুরতে দেখা গেছে। পুলিশের পেট্রোল কারও কিছুক্ষণ পরপর এলাকায় টহল দিচ্ছে।
ডিএমপির ওয়ারী অঞ্চলের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে মানুষজন যাতে ঘরে থাকেন, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পুলিশের টহল টিম, মোবাইল টিম ও পেট্রোল টিম কাজ করছে। চেকপোস্ট আমরা বসিয়েছি, পুরো এলাকায় পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও কাজ করছে। ঢাকা জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করেই পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারওয়ার হোসেন আলো বলেন, ‘আমরা পুরো প্রস্তুতি নিয়েই ভোর থেকে লকডাউন শুরু করেছি। এলাকাবাসীকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। সর্বক্ষণ মাইকিং করা হচ্ছে। যাদের ঘরে খাবার নেই, তাদের খাবারও পৌঁছে দেওয়া হবে। আর যারা টাকা দেবেন তাদের বাজার করে পৌঁছে দেওয়া হবে। এমনকি চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। আর কেউ মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
৪১ নং ওয়ার্ড কমিশনার জানান, তার এ এলাকায় এক লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য বিনা মূল্যে খাদ্যসামগ্রী সরবারহের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ লকডাউন বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরাও কাজ করছেন।
বলধা গার্ডেনের কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পুলিশের একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজারে ২১ দিনের ‘লকডাউন’র পর এটি দ্বিতীয় লকডাউন কাযর্কর হলো।
যদিও নানা অজুহাতে অনেকেই লকডাউন এলাকা থেকে বের হচ্ছেন। এতে লকডাউন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাদের লকডাউন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি নেই।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দায়সারাভাবে লকডাউন হলে তা করোনা প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখবে না। লকডাউন যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তবে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাদের লকডাউন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি নেই। কারও জরুরি কোনো কাজ থাকলে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ কেউ যাতে অপব্যবহার না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
এদিকে গতকাল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হলেও ওয়্যার স্ট্রিটে ১০টার পর থেকে লোকজন ওয়ারী থেকে বের হওয়ার জন্য রাস্তায় বের হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হট কেকের দোকানের সামনে ভিড়ও বাড়তে থাকে। অনেকে সেখানে থাকা বুথে নাম-ঠিকানা লিখে বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছেন। এছাড়া অনেক ব্যক্তিকে কোনো বাধা ছাড়াই বের হতে দেখা গেছে।
দুপুর ১২টার দিকে লকডাউন এলাকা থেকে বের হন যোগীনগরের বাসিন্দা আবুল হোসেন। এ সময় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বুথের খাতায় লিখেছেন, তিনি গুলিস্তান যাচ্ছেন। কিন্তু কেন যাচ্ছেন, কার কাছে যাচ্ছেন, এর কিছুই খাতায় লেখা নেই।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারী এলাকায় লকডাউন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। এ সময় তিনি লকডাউন এলাকায় কোনো অব্যবস্থাপনা নেই বলে দাবি করেন।
এমদাদুল হক বলেন, লকডাউনে প্রতিটি কাজ তারা সুচারুভাবে করছেন। তবে প্রথম দিন হিসেবে যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে, তা আগামী দিনগুলোতে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, লকডাউনের মধ্যে নাগরিক সেবা দিতে ওয়ারীতে ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে। তারা বিভিন্ন খাবার দাবার নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছে। ওসুধের দোকানগুলো খোলা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ করছেন।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, লকডাউন এলাকায় দুজন ডাক্তার রয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। করোনার উপসর্গ আছেÑএমন পাঁচজন ব্যক্তির নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তারা। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে।