রোহান রাজিব: ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ বাড়িয়েছে। চলতি বছরের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৩৩২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ প্রান্তিকে ঋণ অবলোপন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা টাকা, যা মূল খেলাপি ঋণ থেকে সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। মূলত কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ কমাতে এ পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনেক ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন পরিষ্কার রাখতে খেলাপি ঋণ কমানোর সহজ পন্থা হিসেবে অবলোপনকে বেছে নিয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের চেয়ে তারা মনোযোগ দিচ্ছে অবলোপনের দিকে, যা কোনো ভালো সমাধান নয়। কারণ যে পরিমাণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ করা হয়, সে পরিমাণ আদায় হয় না। ঋণ আদায় না করে যদি অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ কৌশল বেছে নেয়া হয়, তাহলে একসময় ব্যাংকের মূলধনও শেষ হয়ে যায়। তাই এটা ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে ঋণ অবলোপন হয়েছে ৩৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে অবলোপন করা ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে অবলোপন করা হয়েছিল ৫২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ওই সময়ে অবলোপন করা ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৩ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের স্থিতিপত্রে থাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অবলোপন করা ঋণ যোগ করলে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ৯৫ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এছাড়া অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে আছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের অর্থ।
ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। ঋণগ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন, তবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসেবে তা দেখানো হয় না।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। আগে মামলা ছাড়া দুই লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপন করা যেত। এখন থেকে অর্থঋণ আদালতে মামলা ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করা যায়। ঋণের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে মামলা খরচ বেশি হয়। এ বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর ছোট ঋণ অবলোপনে এমন সুযোগ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ অবলোপনের নতুন শিথিলতা বড় কোনো বিষয় নয়। ছোট ঋণ অবলোপনের জন্য এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতের একটা ঝামেলা কমবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন সিদ্ধান্তে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় বাড়বে না। কারণ ছোটরা কিছু টাকা দিলেও বড়রা টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু এসব প্রভাবশালীদের থেকে টাকা আদায়ে আইনি কাঠামোতেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে জবাবদিহি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ফেরাতে হবে।