Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:32 pm

অবশেষে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র পেলো ঝিনাইগাতীর ৪ প্রতিবন্ধী

রফিক মজিদ, শেরপুর : অবশেষে ঝিনাইগাতীতে বৃদ্ধা আইমালা বিবি ওরফে আমেলা বেগম সহ তার প্রতিবন্ধী তিন মেয়ের জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করণ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন বাগেরভিটা ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সম্প্রতি এ বিষয়ে দৈনিক শেয়ার বিজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের দ্বিতীয় দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকা হয় তাদের। বৃদ্ধা আমেলা বেগম ওরফে আইমালা বিবি ও তার তিন প্রতিবন্ধী কন্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আল মাসুদ। জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার কার্ড না হওয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয় তাদের।

একইদিন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বৃদ্ধা আইমালা বিবি ও তার তিন কন্যা অজুফা বেগম, দোলেনা বেগম এবং আফরোজা বেগমের জন্ম নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে বাগেরভিটা ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির কেন্দ্রে উপজেলা ভোটার তালিকায় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ওইসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর, ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম, ধানশাইল ইউনিয়ন ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ,৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম মাহমুদ ও স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রোমানা বেগম প্রমুখ।

উল্লেখ্য: বৃদ্ধা আইমালা বিবি উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন উত্তর দাড়িয়ারপাড় গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর স্ত্রী। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে প্রায় ৩০ বছর আগে তার স্বামী আব্দুল আলী মারা যান। মৃত্যু কালে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তান রেখে যান তিনি। সন্তানদের মধ্যে ৩ মেয়ে ও এক ছেলে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী। স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা আইমালা বিবি ওরফে আমেলা বেগম।

একদিকে তার ৪ সন্তান প্রতিবন্ধী অন্যদিকে অভাব অনটনের সংসারের খরচা যোগান দিতে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকা শহর পাড়ি জমান এই বৃদ্ধা। সেখানে ভিক্ষাবৃত্তি সহ অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।

এদিকে বড় মেয়ে আবেদা বেগম সহ একে একে তার অন্যান্য সন্তানেরও বিবাহ দেওয়া হয়। আর তাদের অন্যান্য ভাই বোনদের বিবাহ হলেও কেহ রয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা আবার কারোর স্বামী ইতিপূর্বে মারা যায়। তার বড় মেয়ে আবেদা বেগম স্বামীর বাড়ি থেকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন পাশাপাশি তার ছোট ভাই আলী হোসেনকেও ভোটার তালিকায় আনেন তিনি।

এদিকে বৃদ্ধা আইমালা বিবির এখন বয়স বেশী তাই তিনি আর আগের মতো ভিক্ষাবৃত্তি তো দূরের কথা ঠিক মতো হাটাচলাও করতে পারেন না তিনি।

গত দুই বছর পূর্বে বৃদ্ধা আইমালা বিবি সন্তানদের নিয়ে ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে। স্বামীর রেখে যাওয়া বসত ভিটায় ঢাকার এক ব্যবসায়ী ১টি ঘর নির্মাণ করে দেন তাকে। আর সেখানেই তিনি সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। আবার কখনও চলে যেতেন ঢাকা শহর। বর্তমানে তারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবিকা নির্বাহ হয় তাদের।

বৃদ্ধা আইমালা বিবি জানান, সকলে নানা রোগে আক্রান্ত অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে হিমসিম খেতে তাদের। কোন বেলায় খেয়ে না খেয়ে অনাহারে অর্ধহারে মানবেতর জীবনযাপন করলেও এবার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বৃদ্ধা আইমালা বিবি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আল মাসুদ বলেন, তাদেরকে অল্প সময়ের মধ্য জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।পরবর্তীতে তাদের সরকারী সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।