মো. মিঠু মিয়া, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ): শেষপর্যন্ত সরকারি সহায়তা ছাড়াই, স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধ। নির্মাণ না করায় হুমকির মুখে পড়েছিল জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে নজরখালি বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন প্রায় দুই শতাধিক স্থানীয় কৃষক। তারা নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশ, বস্তা দিয়ে বাঁধটি নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, পাটলাই ও পইকরতলা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। গত সপ্তাহে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এসব নদীর পানি বেশিরভাগ নজরখালি দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৪ লাখ কৃষি পরিবারসহ এ জেলার ২৫ লাখ লোকের একমাত্র ফসল বোরো ধান রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরের ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। জেলায় ১ হাজার ৭৮টি পিআইসির (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) মাধ্যমে ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ-পুনর্নিমাণ, ২১৮টি ব্রিজ ক্লোজিং এবং বিকল্প ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে অবস্থিত নজরখালিতে বাঁধ নির্মাণ করতে আপত্তি জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম নজরখালি বাঁধটি পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় কৃষকদের তিনি এ বাঁধ নির্মাণে আশ্বস্ত করেন। সেই সঙ্গে নজরখালি বাঁধসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কিন্তু হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উপমন্ত্রীর নির্দেশনা মানেনি। এদিকে রোববার দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নজরখালি বাঁধের নির্মাণ কাজ দেখতে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন তাহিরপুরের ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা। এছাড়া মধ্যনগরের বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বাঁধ নির্মাণকাজে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্বেচ্ছাশ্রমে নজরখালি বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘নজরখালি বাঁধ বরাবরই স্থানীয় কৃষকরা নির্মাণ করে। অবশ্য গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি নির্মাণ করেছিল। এ বিষয়ে বলার কিছু নেই।
নজরখালি ফসল রক্ষা বাঁধটির অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। তবে তাহিরপুর ও পার্শ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বোরো ফসল রক্ষায় এই বাঁধটি গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় কৃষকদের মতে, নজরখালি বাঁধের আওতায় প্রায় নয় হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমি রয়েছে।