অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

 

 

গৃহনির্মাণ, সরকারি অবকাঠামো ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট তৈরির ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের কারণে বিভিন্ন দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ইট তৈরি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও ইট তৈরির শিল্পকে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনা করতে বাংলাদেশে ‘ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন’ নামে সময়োপযোগী আইন রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া দেশে কোনো ইটভাটা থাকার কথা নয়। কিন্তু পরিবেশবান্ধব আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন স্থানে ইটভাটা মালিকদের জরিমানা করা হচ্ছেÑএমন খবর প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে।

এটি প্রমাণ করে, মারাত্মক দূষণের জন্য দায়ী ইটভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের টনক নড়ে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতাকেই নতুন করে সামনে এনেছে।

খবরে বলা হয়, মেহেরপুরে ৯২টি ইটভাটার মধ্যে একটি ইটভাটারও অনুমতি ও পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। সব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কোনো কোনো ভাটায় করাতকল দিয়ে কাঠ চেরানো হচ্ছে। অবৈধভাবে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ও প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকলেও কীভাবে চলছে এ ইটভাটাÑএমন প্রশ্নের জবাবে ইটভাটা মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ‘কীভাবে চলে আর চালাতে হয়, সেটা সবাই জানে, বিষয়টি প্রশাসনও জানে। আপনারাও (গণমাধ্যকর্মী) জানেন।’ সবাই জানে বলে অবৈধ ইটভাটাকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই বলেই আমরা মনে করি।

দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে নির্মাণকাজ বেড়ে চলেছে। ইট নির্মাণকাজে অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা পর্যায়ে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। গৃহঋণদানকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামেও গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘গ্রাম হবে শহর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এতে ইটের ব্যবহার বেড়েছে বলেই ধারণা। কিন্তু ইটভাটায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে কয়লার ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলেও বেশি লাভের আশায় অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে কাটতে হচ্ছে গাছ, উজাড় হচ্ছে বনভূমি। ফলে বড় হুমকিতে জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ। আবার জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় চলে যাওয়ায় মাটির উর্বরাশক্তি কমছে। এভাবে বছরের পর বছর ইটভাটাগুলো নানাভাবে মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে আসছে। আইনানুগভাবে সব অবৈধ ইটভাটা অবিলম্বে বন্ধ করা সময়ের দাবি। আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব ইট প্রস্তুত এবং না-পোড়ানো ইটের ব্যবহার প্রসারে উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার উদ্যোক্তা এবং এ শিল্পে নিয়োজিত ২০ লক্ষাধিক শ্রমিকের স্বার্থের কথাও বিশেষভাবে ভাবতে হবে। অনুমোদনহীন ইটভাটার কার্যক্রম কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সে উপায় খুঁজতে হবে। নতুন ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদনদানে সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইটভাটা তৈরিতে নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০