রহমত রহমান: ডেল্টা এলপিজি লিমিটেড চট্টগ্রামভিত্তিক সীকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় পণ্য খালাস করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ৬৬ লাখ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। মামলাসহ ব্যবস্থা নিতে মোংলা কাস্টম হাউসকে প্রতিবেদন দিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় ডেল্টা এলপিজি লিমিটেড অবস্থিত। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, প্রতিষ্ঠানটি মোংলা কাস্টম হাউসে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি আমদানি চালানের পণ্য অবৈধ পন্থায় খালাসের মাধ্যমে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। একই প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীন থেকে এক চালানে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৫৬০ কেজি হট রোল স্টিল কয়েল আমদানি করে, যার পুরুত্ব ৩ মি.মি.-এর কম (থিকনেস লেস দ্যান থ্রি এমএম, এইচএস কোড ৭২০৮.৩৯.২০)।
আরও বলা হয়, এনবিআরের একটি আদেশ (এসআরও-১৭৯, ০১-০৭-২০১৪) অনুযায়ী শুল্কায়নপূর্বক খালাসের জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এসআরও’র শর্ত-১ মোতাবেক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অনুমোদন সাপেক্ষে শুধু এইচএস কোড ৭২০৮.৩৯.২০ (লেস দ্যান থিন থ্রি-এমএম) এর বিপরীতে শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য হট রোটেড স্টিল কয়েল সিলিন্ডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, এ কাঁচামালের পুরুত্ব তিন মিলিমিটারের কম হলে কেবল প্রতিষ্ঠান এ কাঁচামাল আমদানিতে এ রেয়াতি সুবিধা পাবে।
কাস্টম হাউস শুল্কায়নের সময় দাখিল করা দলিলাদি শুল্ক আইনের ফাস্ট শিডিউল, পণ্যের ব্যাখ্যা ও এসআরও’র আলোকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান পণ্যের এইচএস কোড অনুযায়ী তিন মিমি পুরুত্ব ঘোষণা দিলেও দুই দশমিক ৬৫ মিমি দুই লাখ ১৫ হাজার ৯৬০ কেজি হট রোলেড স্টিল কয়েল, যার শুল্ককর ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশসহ অন্যান্য কর রয়েছে। অবশিষ্ট এক লাখ ৩২ হাজার ৬০০ কেজি হট রোলেড স্টিল কয়েলের পুরুত্ব (থিকনেস) তিন মিমি, যার এইচএস কোড ৭২০৮.৩৮.১০ (শুল্ককর ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশসহ অন্যান্য কর রয়েছে) এর বিপরীতে শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য। এসআরও-১৭৯ অনুযায়ী দুই লাখ ১৫ হাজার ৯৬০ কেজির পুরুত্ব ৩ মিমি’র কম হওয়ায় রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়। বাকি এক লাখ ৩২ হাজার ৬০০ কেজি কাঁচামালের পুরুত্ব তিন মিমি হওয়ায় এসআরও অনুযায়ী রেয়াতি সুবিধা পাবে না। ফলে এর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ককর, ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ অন্যান্য কর প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানটি এসআরও’র শর্তানুযায়ী মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ায় তলব করা হলে প্রতিষ্ঠান অপরাধ স্বীকার করে কাস্টমসে সংক্ষিপ্ত বিচারের আবেদন করে। কাস্টমস প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) প্রয়োগ করে অতিরিক্ত রাজস্ব হিসেবে ২৮ লাখ ১৫ হাজার ১০০ টাকা এবং আট লাখ টাকা জরিমানাসহ ৩৬ লাখ ১৫ হাজার ১০০ টাকা আদায় করে চালানটির শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ও জরিমানা পরিশোধ করে চালানটি খালাস নেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি একইভাবে এনবিআরের আদেশের শর্ত ভঙ্গ ও মিথ্যা সিপিসি প্রয়োগ করে মোংলা কাস্টম হাউস থেকে একটি চালান খালাস নিয়েছে বলে জানতে পারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। খোঁজ নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানতে পারে, ডেল্টা এলপিজি ২০১৯ সালে মোংলা কাস্টম হাউস দিয়ে একই কায়দায় একটি চালান খালাস করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে এলসি খোলে (এলসি নং-০০০০১৬৭৪১৯০২০১৩৫)।
একই বছরের ১১ ডিসেম্বর বিল অব এন্ট্রি দাখিল (বিল অব এন্ট্রি নং-২৩০০৯) করে হট রোলেড স্টিল কয়েল খালাস নেয়, যাতে এসআরও শর্ত ভঙ্গ ও বিপিসি’র অনুমোদন ছাড়াই তিন মিমি কাঁচামাল খালাস নেয়। এতে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। মোংলা কাস্টম হাউসকে প্রতিষ্ঠানটির খালাস করা চালানটি বিল অব এন্ট্রি, প্রোফরমা ইনভয়েস, ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে সীকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিতে দেখতে হবে।’ ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) গোলাম কিবরিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা। আমাদের যে দেখে সে অসুস্থ।’
মোংলা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ সেলিম শেখ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চিঠির পর আমরা প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। প্রতিষ্ঠান দোষ স্বীকার করে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে। এত দিনে টাকা কোষাগারে জমা হওয়ার কথা।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ সীকমের গ্রুপের ডেল্টা এলপিজি ছাড়াও সহযোগী প্রতিষ্ঠান সীকম লজিস্টিকস, সীকম কনটেইনার, ইউনিচার্ট নেভিগেশন, ট্রান্সচার্ট নেভিগেশন, এনশিয়েন্ট প্রোপাটিজস, রকনুর মেরিনটাইম, রকনুর হোল্ডিংস ও রূপশা ট্যাংক টার্মিনালস অ্যান্ড রিফাইনারি রয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, ন্যাশনাল সিমেন্টসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব রয়েছে।