অবৈধ সম্পদ আড়ালে স্ত্রীর নামে পোলট্রি ব্যবসায় বিনিয়োগ

নজরুল ইসলাম: অবৈধ সম্পদ গোপন করতে স্ত্রীর নামে পোলট্রি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন এক সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু ব্যবসা-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। স্ত্রীকে দান করেছেন ২০ লাখ টাকা! সম্পদ বিবরণীতে করেছেন তথ্য গোপন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ফেঁসে গেছেন স্বামী-স্ত্রী। তারা হলেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার। আবুল খায়ের চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন।

মামলার এজাহারের অভিযোগ, ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন আবুল খায়ের, যা দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অপরাধ। তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার স্বামীর অবৈধ আয়ের ৬২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮০ টাকা বৈধ করতে সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৬ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন, যা দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২), ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আবুল খায়ের তার সম্পদ বিবরণীতে জানিয়েছেন, তার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। শুধু ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ করবর্ষ থেকে ২০১১-১২ করবর্ষ পর্যন্ত তিনি ৯১ লাখ এক হাজার ৪২৯ টাকার আয় করেছেন। ১৯৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি ও তার স্ত্রী মিলে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির ‘রাকা পোলট্রি ফার্মে’ সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই ব্যবসা থেকে ২০০১-২০০২ করবর্ষে আবুল খায়ের ২০ লাখ টাকার আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু, দুদককে রাকা পোলট্রির রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত তাদের লাভের সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। সেই হিসাবে ২০০০-২০০১ করবর্ষে পোলট্রি খাতে তার প্রকৃত আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি পোলট্রি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ টাকা! অর্থাৎ তিনি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা বেশি আয় দেখিয়েছেন। ২০১১-১২ করবর্ষে তিনি স্ত্রীকে ২০ লাখ টাকা দান দেখিয়ে তার অবৈধ আয়কে বৈধ দেখাতে স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করেছেন। ১৯৯৯-২০০০ করবর্ষ থেকে ২০১১-১২ করবর্ষ পর্যন্ত তার প্রকৃত আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৪২৯ টাকা। তার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বাদে সঞ্চয় পাওয়া গেছে ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ টাকা। অথচ তিনি সম্পদ বিবরণীতে নগদ টাকা হিসেবে ২০ হাজার টাকার তথ্য দেন। অর্থাৎ তিনি নগদ টাকা হিসেবে ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

লুৎফুন নাহার সম্পদ বিবরণীতে ৭১ লাখ ১৬ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দেন। ১৯৯২-৯৩ থেকে ২০১২-১৩ করবর্ষ পর্যন্ত এক কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৮ টাকার আয় দেখিয়েছেন। রাকা পোলট্রি ফার্মে সাত লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য দিয়েছেন। পোলট্রি ব্যবসা থেকে ১৯৯৯-২০০০ ও ২০০১-০২ করবর্ষে ৩৫ লাখ টাকার আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু, দুদককে রাকা পোলট্রির রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত তাদের লাভের সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ১৯৯৯-২০০০ ও ২০০১-০২ করবর্ষে পোলট্রি খাতে তার প্রকৃত আয় হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি পোলট্রি খাতে আয় দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা! অর্থাৎ তিনি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বেশি আয় দেখিয়েছেন!

এছাড়া ১৯৯২-৯৩ ও ২০১২-১৩ করবর্ষ পর্যন্ত ব্যবসার কমিশন থেকে আয় বাবদ ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৮০ টাকা দেখালেও ব্যবসা-সংক্রান্ত রেকর্ডভিত্তিক কোনো প্রমাণ, কাগজপত্র, লাইসেন্স বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কিছু দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি ব্যবসা না করেও আয়কর নথিতে ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৮০ টাকার মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সেই হিসেবে ১৯৯২-৯৩ থেকে ২০১২-১৩ করবর্ষ পর্যন্ত তার প্রকৃত বৈধ আয় ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৮ টাকা। তার কাছে নগদে ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৪৪০ টাকা থাকার পরও তিনি সম্পদ বিবরণীতে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার তথ্য দিয়েছেন! অর্থাৎ তিনি ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার ঘোষিত ও অঘোষিত মিলিয়ে মোট ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮৪ টাকার। অর্থাৎ তিনি ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৬ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদ তার স্বামীর অবৈধ আয় দিয়ে অর্জন করেছেন। 

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (চট্টগ্রাম-১) দায়ের করা দুটি মামলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০