অবৈধ সম্পদ বিনিয়োগ পুঁজিবাজার ও বিমায়

নজরুল ইসলাম : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবি) এক প্রকৌশলীর অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুর্নীত দমন কমিশন (দুদক)। ৬৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর, এক কোটি ছয় লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট এক কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ গোপন করতে তিনি পুঁজিবাজার ও বিমা খাতে বিনিয়োগও করেন। ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে আপন ভাই ও বোনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার তথ্যও দিয়েছেন সম্পদ বিবরণীতে। কিন্তু তদন্তে সেসবেরও সাক্ষ্য-প্রমাণ মেলেনি। নরওয়ে সরকারের নোরাড ফেলোশিপ থেকে আয় করা ডলারের উৎসেরও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ প্রকৌশলীর নাম এসএমএ আজিম। তিনি বিউবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পূর্তকর্ম) হিসেবে কর্মরত। তার আগে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল সিসিপিপি নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন।

এসএমএ আজিমের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছেন দুদকের উপপরিচালক  হাফিজুল ইসলাম।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ৮১০ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন আজিম। এসব সম্পদ গোপন করতে শেয়ার বাজার ও আমেরিকান লাইফ (মেটলাইফ) পলিসিতে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন, যা ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭(১) এবং ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৩-১৪ করবর্ষে অন্যান্য উৎস থেকে আয় ৬৭ হাজার ৪৫০ টাকা, ২০১৪-১৫ করবর্ষে অন্যান্য উৎস থেকে আয় ৭৩ হাজার ৩০ টাকা এবং ২০১৮-১৯ করবর্ষে ব্যবসা বা পেশার আয় হিসেবে প্রদর্শিত তিন লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকার গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি সম্পদ বিবরণীতে ১৯৯৫ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে নরওয়ে সরকারের নোরাড ফেলোশিপ থেকে মোট ২৪ হাজার ডলার আয়ের দাবি করেন। কিন্তু তদন্তকালে বাংলাদেশে এসব ডলার কোন চ্যানেলে নিয়ে এসেছেন, তার কোনো গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য আপন ভাই রেজাউল করিমের কাছ থেকে নেয়া ৩০ লাখ টাকার লেনদেনের কোনো

সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য আপন বোন কামরুন নাহারের কাছ থেকে নেয়া ২০ লাখ টাকার লেনদেনেরও কোনো সাক্ষ্য-

প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আয়কর নথিতেও এ তথ্য দেয়া হয়নি। সেই হিসেবে এই ৫০ লাখ টাকা গ্রহণযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হয়নি। রেমিট্যান্স হিসেবে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আত্মীয়ের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো তথ্যও আয়কর নথিতে পাওয়া যায়নি, তদন্তকালে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণও মেলেনি। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়নি।

সম্পদ বিবরণীতে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় হাউজিং এস্টেটে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাঁচ কাঠা জমি, হালিশহরে ১৪ শতক জমি, পৈতৃক সূত্রে হালিশহরে ছয় শতক ভিটাবাড়িসহ মোট ৬৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। তদন্তে এসব সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের সিকিউরিটিজ রয়েল ক্যাপিটালে শেয়ার বাবদ ক্লোজিং ইকুইটি ৮৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৬ টাকা এবং মেটলাইফে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৬ টাকাসহ মোট এক কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু তদন্তকালে এক কোটি ছয় লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বিমা, আসবাবপত্রবাবদ ও ব্যাংকে স্ত্রী নবতারা নূপুরের নামে যৌথ হিসাবে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, যা দুদক আইন, ২০২৪-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তদন্তে আসামির ৬৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও এক কোটি ছয় লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পসহ মোট এক কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে এসএমএ আজিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তাদের (দুদক) যোগ-বিয়োগে ভুল আছে। এটা হাস্যকর মামলা।’

দুদক সূত্র জানিয়েছে, তার স্ত্রী নবতারা নূপুরের নামেও দুদকে মামলা রয়েছে, যার তদন্ত চলমান। তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। এসএমএ আজিম ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০