‘অবৈধ হস্তক্ষেপে’ টিআইবির উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর অনৈতিক হস্তক্ষেপে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে।

গতকাল টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান। এতে অনিয়ম ও অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত বিএসইসি কর্তৃক এ অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। একইসঙ্গে বাছাই প্রক্রিয়ায় শীর্ষস্থানপ্রাপ্ত  প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা ও অবৈধ চাপ সৃষ্টিকারী দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সংগঠনটি বিএসইসিতে এ ধরনের হীন প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শেয়ারবাজারের উন্নয়নকল্পে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএসইর উন্নয়নকল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতি, কারিগরি দক্ষতা ও উৎকর্ষ অর্জনে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কৌশলগত বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিএসইসি’র অনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টা দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। রক্ষক হয়ে বিএসইসি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে না, তাও দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে বা প্রভাবান্বিত হয়ে।’

তিনি বলেন, ‘দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধÑবিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন জোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার বাছাইকরণ প্রক্রিয়ায় দর প্রস্তাবের নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতার ভিত্তিতে নির্বাচিত সর্বোচ্চ দরদাতা, সবচেয়ে যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছেই শেয়ার বিক্রি করা হবে, যা স্বাভাবিক, প্রথাগত ও আইনসিদ্ধ।’

সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাছাই না করে উপযুক্ত কারণ ছাড়া দ্বিতীয় দরদাতাকে বাছাই করা হলে তা হবে আইনের ব্যত্যয়, যা পুরো প্রক্রিয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আইন অনুযায়ী ডিএসইর জন্য শুভ ও লাভজনক হবে, এমন সর্বোচ্চ দরদাতা, যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার নির্বাচনে ডিএসই’কে আইন অনুযায়ী চলতে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে সরকারেরও সচেষ্ট হওয়া উচিত বলে মনে করে টিআইবি।

সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দর যাচাই শেষে আইন অনুযায়ী ডিএসই বোর্ড কর্তৃক বাছাইকৃত বিজয়ী পক্ষকে নির্বাচিত করে অনুমোদনের চিঠি বিএসইসি’কে না পাঠানোর মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসইর শেয়ারধারীসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। টিআইবি মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক আচরণ ও ধসের ধারাবাহিকতা রোধে নেওয়া উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। বাজার কারসাজি, যোগসাজশ ও কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে গোষ্ঠী বারবার বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করেছে, সে চক্র এ ধরনের অশুভ পাঁয়তারায় লিপ্ত কি-না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। এছাড়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে না হয় ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সৎসাহস  থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে টিআইবি।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০