বীর সাহাবী: পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগবান্ধব ও স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠন করা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) কর অব্যাহতির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন করেছে। কর অব্যাহতি দিলে যে অর্থ বাঁচবে তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে বলে সিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া চিঠিতে সিএমএসএফ বলেছে, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তিন বছর ও তৎপূর্বকার অদাবিকৃত এবং অবণ্টিত নগদ বা স্টক লভ্যাংশ অপরিশোধিত পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ এবং অবরাদ্দকৃত রাইটস শেয়ার স্থানান্তর করে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে নগদ ও স্টকের হেফাজত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ফান্ডে জমাকৃত নগদ টাকা এবং স্টক যেকোনো সময় শেয়ারহোল্ডারদের পরিশোধপূর্বক তাদের দাবি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ফান্ড থেকে আসা আয় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে তহবিলে জমা করা হচ্ছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আনতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে, যার কোনোটিই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নয়।
সিএমএসএফ বলেছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলের অংশ-১-এর ধারা ১০-এর দ্বারা বিএসইসি কর্তৃক স্বীকৃত মিউচুয়াল ফান্ড, বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট এবং এক্সচেঞ্জ ফান্ডের থেকে অর্জিক যেকোনো আয়কে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদ্রৃপ বিএসইসির একটি অলাভজনক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হওয়ার সুবাদে সিএমএসএফকেও কর অব্যাহতি দিলে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ ব্যাপারে সিএমএসএফের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. মনোয়ার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কর দেশের অর্থনীতিতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবুও আমরা কর অব্যাহতি চাইছি, কারণ এই ট্যাক্সের টাকাটা আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারব। এই অর্থ মার্কেটে যুক্ত হলে অন্যদিক দিয়ে লাভবান হবে দেশ। মার্কেটের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। যেহেতু আমরা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আর আমাদের কাজই হচ্ছে মার্কেটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, সেহেতু আমরা চাই এটা হোক।
সিএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে। ৭০টি ইস্যুয়ার কোম্পানির এক হাজার ৫২৫ জন বিনিয়োগকারী এ অর্থ পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারসংখ্যার পরিমাণ এক কোটি ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৮ এবং স্টক ডিভিডেন্ডের বিপরীতে ছয় লাখ ৩৯ হাজার ৬২২ শেয়ার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারের বাজারমূল্য ১১৩ কোটি এবং স্টক ডিভিডেন্ডের বাজারমূল্য ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পাশাপাশি ক্যাশ ডিভিডেন্ডের তিন কোটি দুই লাখ টাকা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিএমএসএফের ফান্ডের আকার এক হাজার ২৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত ও দাবিহীন নগদ লভ্যাংশের ৭১০ কোটি টাকা। আর বোনাস ও রাইট শেয়ারের মূল্য প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। গত বছর এ ফান্ডের পরিচালন ব্যয়
মিটিয়ে আরও ৯ কোটি টাকা যুক্ত করা হয়েছে। এ বছর তার চেয়েও বেশি টাকা এ ফান্ডে যুক্ত হতে পারে।
অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ কী
কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা তাদের ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীদের নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নগদ লভ্যাংশ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। স্টক লভ্যাংশ জমা হয় তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে।
যাদের নামে শেয়ার তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে, কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এমন ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়। বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে তার মনোনীত উত্তরাধিকারও সেই টাকা বা শেয়ার আর দাবি করেন না।
এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছায় না অনেক সময়। তখন কোম্পানি ওইসব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে। সিডিবিএল হিসাবে থাকা ওই রকম তিন হাজার ৩১৫টি সাসপেন্ডেড হিসাবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ রয়েছে।
বিএসইসি ২০২১ সালে এই দাবিহীন লভ্যাংশ একসঙ্গে এনে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিতরণ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সিএমএসএফ গঠন করে। ফান্ড এরই মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমান বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ব্রোকার হাউসগুলোকে স্বল্প সুদে আরও ২৫০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয়ার কথা এ ফান্ড থেকে।