Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:32 pm

অব্যাহতি না দিলে কর জিডিপি ১৭-এর ওপরে থাকত: এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: কর অব্যাহতি না দিলে আমাদের কর জিডিপির অনুপাত ১৭-এর ওপরে থাকত বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, কর সহায়তা দেয়ার ফলে শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক খাতে আমরা অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি।

গতকাল এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ‘রাজস্ব আহরণ পরিকল্পনা’র বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে রাজস্ব আহরণ কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক স্থপতি মো. আনোয়ার হোসাইন।

সেখানে বলা হয়, ২০২০-২১ করবর্ষে বাংলাদেশে কর জিডিপির অনুপাতের হার ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ করবর্ষে ছিল ৭ দশমিক ৭৪, ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৮ দশমিক ৬৮, ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৯ দশমিক ১০, ২০১৬-১৭ করবর্ষে ৮ দশমিক ৬৯, ২০১৫-১৬ করবর্ষে ৮ দশমিক ৮৮, ২০১৪-১৫ করবর্ষে ৮ দশমিক ৯৫, ২০১৩-১৪ করবর্ষে ৮ দশমিক ৯৯, ২০১২-১৩ করবর্ষে ৯ দশমিক ১০ ও ২০১১-১২ করবর্ষে ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

কর জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কর জিডিপির অনুপাত ৯-এর নিচে। কর জিডিপিতে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি এমন একটি অপবাদ আমাদের আছে। আমাদের সমমনা ও অর্থনীতির দেশের কর জিডিপি ১২, ১৩, ১৪, ১৫ বা এর চেয়েও বেশি। আমাদের কর জিডিপি নিয়ে আমরা চিন্তিত বা হতাশ নই। আমরা হিসাব করে দেখেছি, আমরা কর অব্যাহতি যদি না দিতাম, তাহলে আমাদের কর জিডিপির অনুপাত কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছে যেত। আমরা বাজেটের আগে হিসাব করে দেখেছি, অব্যাহতি না দিলে আমাদের কর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১৭-এর ওপরে থাকত। কর সহায়তা দেয়ার ফলে শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক খাতে আমরা অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি। কর অব্যাহতি দেয়ার ফলে সম্পদের সুষম বণ্টন, ব্যবহার ও সুযোগ তৈরি হয়েছে। গরিব জনগোষ্ঠীর পরিমাণ কম, শিক্ষার হার বেশি, মাতৃমৃত্যুহার কম।’

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রণয়নের সময় বিরাট একটি লক্ষ্য ছিল স্থানীয় শিল্পের বিকাশ। আমরা ভেবেছিলাম, কোনো শিল্পের বিকাশ হলে উন্নত বিশ্বের কাতারে যাওয়া আমাদের জন্য সহায়ক হবে। আমাদের উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে হলে শুধু গার্মেন্ট ও পাদুকাশিল্পের ওপরে নির্ভর করে থাকলে চলবে না। আবার ভারী শিল্পের দিকে যদি বেশি নির্ভরশীল হই, তাহলে দেখতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের ভারী শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু আছে। ভারী শিল্পে যেতে হলে জয়েন্ট ভেঞ্চার বা জয়েন্ট ইনভেস্টমেন্ট হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মধ্যম সারির ভোক্তা বাড়ছে। অর্থনীতিতে মধ্যম সারির ভোক্তার অবদান বাড়ছে। শিল্পের ক্ষেত্রেও মধ্যম সারির ভোক্তাদের বিষয়ে কনসিডার করা হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে এশিয়াতেই মধ্যম সারির ভোক্তা বাড়বে ৫০ শতাংশ। আর এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান ও ইন্দোনেশিয়াতে মধ্যম সারির ভোক্তা বাড়বে ৬০ শতাংশের বেশি। মধ্যম সারির ভোক্তা বাড়লে আমাদের যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়বে, সেই পণ্যগুলোর আমদানি-নির্ভরতা আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মধ্যম সারির ভোক্তারা যেসব পণ্য ব্যবহার করে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বৈদ্যুতিক ফ্যান, টেলিভিশন, ইস্ত্রি, ফ্রিজ, ব্ল্যান্ডার, রাইস কুকার, মোটরসাইকেল প্রভৃতি। বাংলাদেশে এ পণ্যগুলোর মার্কেট বাড়ছে, বাড়তেই থাকবে। পণ্যগুলোকে টার্গেট করে আমাদের দেশের টাকা বাইরে চলে যাবে, তা হতে দেয়া যাবে না। পণ্যগুলোয় আমরা সাপোর্ট দিতে পারি এবং স্থানীয় বাজার দখল করতে পারি, এ টার্গেট আমাদের ছিল। মার্কেটকে ধরেই আমাদের শিল্পের উন্নয়ন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। আর আমাদের উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার বাজেটে এই শিল্পকে সাপোর্ট দিয়েছি।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মেইড ইন বাংলাদেশÑএই সেøাগানকে সামনে রেখেই আমরা এই শিল্পকে কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সুবিধা দিয়েছি। এই খাতে বিনিয়োগকারী যাতে ধীরেসুস্থে আসতে পারে সেজন্য আমরা ২০৩০ পর্যন্ত এই সুবিধা রেখেছি। আমরা চাচ্ছি দেশে একটি শিল্পবিপ্লব হোক, সেই বিপ্লব এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই শিল্পে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল সরবরাহ করতে হবে। সেখানে আমাদের একটা ঘাটতি রয়ে গেছে। শিল্পের উপযোগী জনবল সরবরাহের একটা ঘাটতি রয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের অনেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দরকার, কিন্তু নেই। কেউ যদি দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করে, তাকেও আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করব। স্থানীয় শিল্পের বিকাশে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে ছাড় দিয়েছি।’