অভিজিৎ হত্যার বিচার চেয়ে সাক্ষ্য দিলেন বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার চেয়ে সাক্ষ্য দিতে গতকাল সোমবার ঢাকার আদালতে এসেছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি বসে ছিলেন। এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছুটিতে থাকায় চেয়ারে করে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এ। এই আদালতের বিচারক গতকাল সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেসমিন আরা বেগম আদালতে আসেন বেলা ২টা ২০ মিনিটে। তখন অজয় রায়কে বিচারকের চেয়ারের পাশের একটি চেয়ারে বসানো হয়। ৮৫ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক তখন সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন।

অজয় রায় আদালতকে বলেন, সেদিন ছিল ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তখন বাংলা একাডেমিতে বইমেলা চলছিল। তিনি ছিলেন বাসায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে খবর পান, তার ছেলে অভিজিৎ ও পুত্রবধূ রাফিদা আহমেদ বন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় (টিএসসিতে) আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

 তাদের কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। খবর পাওয়ার পর ছোট ছেলে অনিজিৎ রায়কে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন।

আদালতকে অজয় রায় আরও বলেন, তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, অভিজিৎকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। এরপর রাত ১০টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আর অভিজিৎ রায়ের স্ত্রীকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় স্কয়ার হাসপাতালে। স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও আঘাত করা হয়। ক্ষতবিক্ষত রাফিদার বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে পড়ে যায়। এরপর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন অজয় রায়।

অজয় রায়ের হাতের লেখা সেই এজাহার তাঁকে আজ দেখানো হয়। আদালতে তিনি নিজের স্বাক্ষর এবং মামলার এজাহার শনাক্ত করেন। এরপর অজয় রায় আদালতের কাছে অনুরোধ করেন, তাঁর বয়স ৮৫ বছর। তিনি আর আদালতে আসতে পারবেন না। বিচারক জেসমিন আরা বেগম তখন তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘আজই আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে যাবে। আপনাকে আর সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসতে হবে না।’ এরপর অজয় রায়কে জেরা করতে শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

প্রথমে এই হত্যা মামলার আসামি আবু সিদ্দিক সোহেলের পক্ষে অজয় রায়কে জেরা করেন আইনজীবী এ বি এম খায়রুল ইসলাম। তিনি জানতে চান, অভিজিৎকে হত্যা করার খবর কখন তিনি প্রথম জানতে পারেন। জবাবে অজয় রায় বলেন, রাত সাড়ে আটটার পরে তিনি ওই খবর পান।

আবু সিদ্দিক সোহেলের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম আরও জানতে চান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক অভিজিতের ওপর হামলার খবর দিয়েছিলেন কি না? জবাবে অজয় রায় বলেন, হ্যাঁ, দিয়েছিলেন। তবে কোন অধ্যাপক, তা তাঁর মনে নেই। জেরার জবাবে তিনি আদালতে আরও বলেন, যেখানে ফেলে অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রীকে হামলা করা হয়েছিল, সেদিন তিনি আর সেখানে যাননি। তাঁর ছেলে ধর্ম ও দেশের বিরুদ্ধে কোনো লেখালেখি করতেন না।

জেরা চলাকালে তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি খুব টায়ার্ড।’ মামলার আরেক আসামি শাফিউর রহমান ফারাবীর পক্ষে আইনজীবী ছিল না। ফারাবী নিজেই অজয় রায়কে জেরা করেন।

অজয় রায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় বেলা ৩টা ২২ মিনিটে। এরপর তিনি রমনা থানার পুলিশের গাড়িতে করে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে আদালত আগামী ১৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে চাপাতির কোপে ব্লগার ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায় নিহত হন। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ আহত হন। অভিজিৎ ও রাফিদা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে তাঁরা দেশে এসেছিলেন। মেলা থেকে বেরিয়ে বাসায় ফেরার পথে তাঁরা ওই হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০