অভিবাসনে পাঁচ ধাপে ১৬ ধরনের দুর্নীতি: টিআইবি  

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শ্রম অভিবাসন পুরো প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। এখনও ‘দালালনির্ভর’ থাকায় দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিককে দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া বছরে অভিবাসন কর্মীদের ভিসা সংগ্রহ করতে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল টিআইবির কার্যালয়ে ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেশের শ্রম অভিবাসন খাতের সুশাসন নিশ্চিতে বিদ্যমান আইনের সংস্কার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বৈধ শ্রম অভিবাসনের বিভিন্ন বিষয়সংবলিত তথ্যের প্রচারসহ ৯ দফা সুপারিশ পেশ করেছে টিআইবি।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই-খোদা। ওই গবেষণায় আরও সম্পৃক্ত ছিলেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। পুরো শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ‘দালালনির্ভর’ উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, গন্তব্য দেশের ভিসা গ্রহণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাত্রপত্র পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে দালালের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। এছাড়া ২০১৬ সালে অভিবাসন কর্মীদের ভিসা সংগ্রহ করতে হুন্ডির মাধ্যমে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।

মুখ্য তথ্যদাতাদের সাক্ষাৎকার, নিবিড় সাক্ষাৎকার এবং দলগত আলোচনা ছাড়াও শ্রম অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, আইন ও বিধি, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গবেষণা, প্রবন্ধ, সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও দলিল, এবং সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনাপূর্বক ২০১৬ সালের মে থেকে জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত সময়কালে এ গবেষণার তথ্য সংগৃহীত, বিশ্লেষিত এবং প্রতিবেদন প্রণীত হয়।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ এর কিছু আইনি ও প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যে এই আইনে শ্রম অভিবাসন খাতে সক্রিয় ‘দালাল’দের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আইনের অনেক ধারা নির্দেশনামূলক করা হলেও সেগুলো বাধ্যতামূলক নয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভিবাসনকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। অন্যদিকে মোবাইল কোর্টে বিচারের ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদানে এখতিয়ার সংক্রান্ত অস্পষ্টতা, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীর ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা না রাখা, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ও ডেটাবেইজ থেকে কর্মী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

সুশাসন বিষয়ক ঘাটতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রয়োজনীয়  প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, বাজেট ও জনবল স্বল্পতা,  প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণের ঘাটতি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণসহ রিক্রুটিং এজেন্টদের কার্যক্রমে বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, একাধিকবার বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ঘাটতি, গন্তব্য দেশে ভিসা কেনা-বেচা, গন্তব্য দেশে কর্মসংস্থানের বৈধতা যাচাই এবং বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ক্ষেত্রে জটিল ও দীর্ঘ অভিবাসন প্রক্রিয়া।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০