Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 6:45 pm

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও চালকের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝালকাঠির সুগন্ধ নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও ইঞ্জিন চালককে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

গত সোমবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নৌ-সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জমা পড়ে বলে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান।

২৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরগুনায় যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় অভিযান-১০। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ৮০ জন।

ওই ঘটনার পর যুগ্ম সচিব তোফায়েল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ঘুরে দেখেন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।

তদন্ত কমিটিতে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুন লেগেছে আর এই দুর্ঘটনার জন্য মালিক, লঞ্চের মাস্টার ও ইঞ্জিন চালকদের দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির ওই সদস্য বলেন, ‘সার্ভেয়ারকে দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করা না হলেও তার তদারকির অভাবের কথা প্রতিবেদনে এসেছে।’

এছাড়া বেশ কয়েকটি সুপারিশও দিয়েছে তদন্ত কমিটি। লঞ্চে যাত্রী তোলার আগে টিকিট কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং লঞ্চরুট মালিকদের একক আধিপত্যের রাস্তা বন্ধ করার সুপারিশও সেখানে রয়েছে।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত যে ৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে, তাদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে ৩৬ জন এবং পরে নদীতে ভাসমান পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং ঢাকায় আনার পথে একজন মারা যান। এছাড়া গত কয়েক দিনে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন আরও চারজন।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর বলেছে, ঝালকাঠির নলছিটি থানা এলাকা অতিক্রম করার পর ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় পুরো নৌযানটি আগুনে পুড়ে যায়। সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও ছিল না। পর্যাপ্ত বালির বাক্স ও বালতি ছিল না। ইঞ্জিন রুমের বাইরে অননুমোদিত ডিজেলবোঝাই অনেক ড্রাম ও রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ছিল, যা নিয়মের পরিপন্থি।

এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান বাদী হয়ে লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও চালককে দায়ী করে নৌ-আদালতে মামলা করেছেন।

লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, মো. শামীম আহমেদ ও মো. রাসেল আহম্মেদকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লঞ্চের মাস্টার রিয়াজ আহমেদ, খলিলুর রহমান, ইঞ্জিন চালক মাছুম বিল্লাহ ও আবুল কালাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।