প্রতিনিধি, জবি: শেষ হলো প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ২০টি সরকারি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। গতকাল সোমবার ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে গুচ্ছের তিন ইউনিটের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান) ও ২৪ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুই ইউনিটেরই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বাদবাকি সি ইউনিটের (বাণিজ্য) ফলও পাওয়া যাবে এক- দু’দিনের মধ্যেই।
এরমধ্যে ‘এ’ ইউনিটের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রের আসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-পরবর্তী সময়ে ‘বি’ ইউনিটের ফলে বাংলার রেজাল্ট ইংরেজিতে আর ইংরেজির রেজাল্ট বাংলায় দেখানোর মতো ভুতুড়ে কাণ্ডে পরীক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
‘বি’ ইউনিটের ফলাফলে সাইবার হ্যাকার সমস্যা করেছিল, পরে রেজাল্ট ঠিক করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ।
এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যেতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা, অর্থ ব্যয়সহ বিভিন্ন দুর্ভোগ লাঘবের জন্য গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু হলেও ভোগান্তি থেকেই গেছে বলে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ। গুচ্ছের শুরুতে হঠাৎ করে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত, পরীক্ষার মনোনয়নের জন্য সিজিপিএ বেশি রাখা, পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ করা, পরীক্ষা কেন্দ্র অনেকের দূরের বিভাগে পড়া, কর্মদিবসে পরীক্ষা, ফলাফলে অসামঞ্জস্য এবং অভিযোগ গ্রহণের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের এই পরীক্ষা ‘গোড়ায় গলদ’ এ পরিণত হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। সর্বশেষ ‘বি’ ইউনিটের ফল নিয়ে অভিযোগের তীব্রতা দেখা যায়। বি ইউনিটের ফলাফলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের দেয়া উত্তরের সঙ্গে ফলের মিল নেই। তারা যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে ফলে উত্তরের সংখ্যা কারও বেশি কারও কম। এতে কেউ উত্তরের থেকে বেশি নাম্বার আবার কেউ কম নাম্বার পেয়েছেন। এ অভিযোগ নিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। একসঙ্গে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় হারালাম বলে তারা জানায়। তবে ফল প্রকাশের রাতেই ওয়েবসাইটে টেকনিক্যাল সমস্যা বলে ফল প্রকাশ বন্ধ রেখে পরে নতুন করে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এরপরও অনেকের অভিযোগ থাকলে পুনঃনিরীক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানায় কমিটি।
অন্যদিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন ত্রুটি থাকলেও স্বস্তি প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তাদের মতে, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। আর্থিক দিক থেকেও অনেক ব্যয়সাধ্য। যাতায়াত, থাকা ও খাওয়ার ঝামেলাও কমেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. ইমদাদুল হক বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কভিড থাকায় সশরীরে অনেক সভা করা যায়নি। প্রথমবারের ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করলে পরেরবার থেকে অনেক ভালোভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। এমনিতে একজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার যে ভোগান্তি তা থেকে সবাই রেহাই পেয়েছে।