Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:29 am

অভিহিত দরের নিচে শেয়ার কিনে শতভাগ মুনাফা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ:অভিহিত দর বা ফেসভ্যালুর নিচে দর থাকা শেয়ার কিনে বছরের ব্যবধানে শতভাগের বেশি মুনাফা করেছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা। এক বছর আগেও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ছিল অভিহিত দরের নিচে। পরে সেসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা হয় ২৯ থেকে ১৮৮ শতাংশ পর্যন্ত। বছরের একটা পর্যায়ে দর তলানিতে থাকলেও বর্তমানে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের ওপরে রয়েছে।

যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগকারীরা বিপুল মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, সেগুলো হচ্ছেÑবস্ত্র খাতের তাল্লু স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট ও সিঅ্যান্ড টেক্সটাইল; ব্যাংকিং খাতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক; বিমা খাতের ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ও জনতা ইন্স্যুরেন্স; খাদ্য খাতের বিচ হ্যাচারি, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পিইটি; প্রকৌশল খাতের সুহদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কাগজ ও প্রকাশনা খাতের খুলনা প্রিন্টিং।

এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বৃদ্ধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে খোদ কোম্পানি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্টদের। শেয়ারের দর কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য হারে মুনাফা করতে পেরেছেনÑকেউ কেউ এমন কথা বললেও এতে দ্বিমত পোষণ করেছেন অনেকে।

তাদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের দর বৃদ্ধি পাওয়াও অস্বাভাবিক। তাদের দৃষ্টিমতে, এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে কারসাজির অভিযোগও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই শেয়ারসংখ্যা কম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা খুব সহজ। এসব শেয়ারের দর যেমন দ্রুত বাড়ে, তেমনি কমেও যেতে পারে। তাই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারের দর যতই কম হোক না কেন দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে দেখেশুনে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। কারণ এখানে ঝুঁকি অনেক কম। পাশাপাশি এসব কোম্পানিতে ভালোমানের রিটার্ন আশা করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক বছরে শেয়ারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ দরের হিসাবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে খাদ্য খাতের বিচ হ্যাচারির। এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারে মুনাফা হয় ১৮৮ শতাংশ। যেসব বিনিয়োগকারী সর্বনি¤œ আট টাকা দরে শেয়ার কিনে ২৩ দশমিক ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পেরেছেন।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব নূর ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোনো একটি চক্র এই শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। সম্ভবত তারাই বিভিন্ন গুজব কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফাইদা হাসিল করার চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে এমন কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই, যাতে শেয়ারের দর বাড়তে অথবা কমতে পারে।’

এছাড়া খাদ্য খাতের অন্য দুই প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিইটির শেয়ারে ১৬০ শতাংশ এবং কনডেন্স মিল্কের শেয়ারে মুনাফা হয়েছে ১৫২ শতাংশ।

তালিকায় থাকা অন্য দুই কোম্পানি প্রকৌশল খাতের সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং কাগজ ও প্রকাশনী খাতের প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারে মুনাফা হয়েছে ১১৭ শতাংশ।

এছাড়া ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে ৯৫ শতাংশের বেশি এবং জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার মুনাফা হয় ৮৩ শতাংশ।

অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২২ শতাংশ মুনাফা হয়েছে প্রিমিয়াম ব্যাংকের শেয়ারে। আর ১০১ শতাংশ মুনাফা হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে মুনাফা হয় ৯৯ শতাংশ। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারে ৮৬ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংকে ৮০.২১ এবং নাশন্যাল ব্যাংকের শেয়ারে মুনাফা হয় ২৯ শতাংশ করে।

একইভাবে বস্ত্র খাতের চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি মুনাফা হয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ারে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ম্যাকসন স্পিনিংয়ের শেয়ারে প্রায় ৯৬ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সটের শেয়ারে ৯০ শতাংশ এবং তাল্লু স্পিনিংয়ের শেয়ারে ৭৪ শতাংশ মুনাফা হয়।