মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: চাঙা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে স্বল্প দরের শেয়ার। স্বল্প বিনিয়োগ করে বেশি লাভ করার প্রবণতা নিয়ে এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন তারা। এ কারণে দ্রুতই বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর, যার জের ধরে ১০ টাকার নিচে থাকা শেয়ার ও ইউনিটের দর আবার অভিহিত দরে (১০ টাকায়) ফিরতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ টাকা অতিক্রম করেছে। বাজার পতনের জের ধরে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অভিহিত দরের নিচে নেমে গেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার আগেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ টাকার নিচে নেমে যায়। আর ২০১৯ সাল শেষে পুঁজিবাজারের এ ধরনের কোম্পানি ও ফান্ডের সংখ্যা ছিল ৬১টি। এ নিয়ে মোট ১০ টাকার নিচে দর থাকা কোম্পানি ও ফান্ডের সংখ্যা ছিল ৯২টি।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত দুই কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে বাছ-বিচার না করে কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া। দ্বিতীয়ত, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না থাকা। তবে বর্তমানে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে এসব শেয়ারদর বাড়ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শেয়ারদরই সার্বিক বাজারচিত্রের কারণে অর্থাৎ সব ধরনের শেয়ারদর বাড়ার কারণে এসব শেয়ারদর বাড়ছে। তার মানে এই নয় যে কোম্পানির আর্র্থিক অবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তাই এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে ভাবতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্প্রতি যেসব কোম্পানির শেয়ার অভিহিত দরে ফিরে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্যাংক খাতের এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। একইভাবে বস্ত্র খাতের রয়েছে কাট্টলী টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস, রিজেন্ট টেক্সটাইল, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিং, মিথুং নিটিং এবং ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং।
অন্যদিকে সম্প্রতি বাজার উত্থানের জের ধরে অভিহিত দরে ফিরে এসেছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফু-ওয়াং সিরামিক, শাইন পুকুর সিরামিক. দেশবন্ধু পলিমার, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফার কেমিক্যাল, সালভো কেমিক্যাল, সিএপিএম বিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এনএলআই ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সাউথইস্ট ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, এসইএমএল গ্রোথ মিউচুয়াল ফান্ড এবং মেঘনা পিইটির শেয়ার ও ইউনিটদর।
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় সব শেয়ারদরই কমেছে। তবে কিছু শেয়ারদর কমেছে অস্বাভাবিক হারে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই শেয়ারহোল্ডারদের ভালো রিটার্ন দিতে পারেনি। ফলে চাহিদা কমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকায় প্রায় সব ধরনের শেয়ারদরই বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে দর বাড়লে যে কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের উচিত সব সময় ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকা।
একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে নেমে যাওয়ার মূল কারণ একটিইÑতা হচ্ছে ভালো কোম্পানির অভাব। কয়েক বছর ধরে যেসব কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই দুর্বল। এসব কোম্পানি বাজারে আনার সময় বাছ-বিচার করা হয়নি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান, আর মাশুল দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এখন বাজার ভালো হচ্ছে। এ সময়ে বাজারে ভালো ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। তাহলে বিনিয়োগকারীরাও ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। সে কারণে নিম্নমুখী ভালো-মন্দ প্রায় সব শেয়ারের দরই, যার ফলে দর একসময় ১০ টাকার নিচে চলে যায় বিভিন্ন শেয়ারে। গত বছরের শেষ সময়ে এসে বাজারে নতুন করে আবারও পতন দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই সূচক হ্রাস পেতে থাকে এক থেকে দুই শতাংশ করে, যা চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময়ে নতুন করে ৩১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে নেমে যায়। অবস্থার বেগতিক দেখে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, ফ্লোর প্রাইস বেঁধে না দিলে শেয়ারদর আরও ভয়ানক হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল।