ডলার সংকটেও বিলাসী পরিকল্পনা: ২০৪১ সালে গ্যাসের ৬৮% জোগান আসবে এলএনজি থেকে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটিকে কোনোভাবেই দেশের জন্য ভালো খবর বলার সুযোগ নেই। তথ্যমতে, এলএনজি কেনায় আগামী অর্থবছরেই কঠিন শর্তে ও উচ্চ সুদে বিদেশি ঋণ নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের অস্বাভাবিক ওঠানামা ও দেশে ডলার সংকটের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে হোঁচট খায় সরকার। সমস্যার সমাধানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিয়ে আসছেন। অথচ ২০৪০-৪১ অর্থবছর দেশে সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রায় ৬৮ শতাংশ এলএনজি থেকেই আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর পেট্রোবাংলায় দেশের গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি এবং দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগবিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে আগামী ১৮ বছরে গ্যাসের সম্ভাব্য চাহিদা ও সরবরাহের চিত্র তুলে ধরা হয়। তবে দেশীয় স্থলভাগে (অনশোর) গ্যাস ক্রমেই কমে আসা এবং সমুদ্রসীমা (অনশোর) থেকে ন্যূনতম গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে পরিকল্পনায় দেখানো হয়।
গ্যাস বর্তমান সভ্য জগতের প্রধান জ্বালানি। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে আধুনিক অর্থনীতি এবং শিল্পকারখানা। পরিবারের ছোট্ট পরিসর থেকে শুরু করে যানবাহন এবং কলকারখানার বৃহৎ পরিসরÑসর্বত্রই এখন গ্যাসের ব্যবহার বিদ্যমান।
গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে বর্তমানে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। এটি সাময়িক সমাধান। বৈশ্বিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস সংকটের সমাধান করতে হলে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে হবে। সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ের ভূতাত্ত্বিক জরিপে বাংলাদেশের মাটির নিচে এবং এ দেশের সমুদ্রসীমায় ব্যাপক পরিমাণে গ্যাস মজুতের আভাস পাওয়া গেছে। ভাটির দেশ হওয়ায় এদেশের মাটির নিচে দীর্ঘমেয়াদে অধিক পরিমাণে গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা বেশি।
শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস ও বিদু্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এ চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের বিকল্প নেই। গ্যাস সংকট এড়াতে আমাদের ত্রিমাত্রিক সাইসমিক জরিপ ও বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গোপসাগরের অফশোর ও অনশোরে (গভীর ও অগভীর) মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি। আমাদের জলসীমার পাশেই নিজস্ব সীমায় গ্যাস পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আমাদের সেখানে জরিপ ও অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে। গ্যাসের সহজলভ্যতা একটি দেশের শিল্পায়নের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, বিপরীতে গ্যাসের স্বল্পতা শিল্পায়নের বিকাশকে মন্থর করে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎস ও সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।