নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায়, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশে কর জিডিপির হার অনেক কম। এ অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। ফলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উৎসাহিত হচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে করজাল বাড়ানোসহ কর ব্যবস্থায় চলমান সংস্কার কার্যক্রম জোরদার এবং ভ্যাট ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল করার পরামর্শ দিয়েছেন সফররত আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশনের প্রতিনিধিরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করে প্রতিনিধিদলটি। আইএমএফের এশীয় ও প্রশাস্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ এ দলের নেতৃত্ব দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে চলমান ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো এবং বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা (ঋণ) চেয়েছে সরকার। ইআরডি সচিব এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই ঋণের বিষয়ে অনেকটাই নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ। কী কারণে সরকার এই বাজেট সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে বৈঠক দুটিতে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা বাজেট সহায়তা পাওয়ার যে সামর্থ্য রাখি, সেটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেমন গত বছর তিন লাখ শ্রমিক বিদেশে গেলেও এ বছর প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক বিদেশে গেছেন। গত পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে এই অঙ্ক অনেক বেশি। দু-তিন মাসের মধ্যেই তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করবেন। তখন আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আমদানি বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। কিন্তু আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও বেড়েছে। কেননা আমাদের বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়াটা অর্থনীতি গতিশীলতার লক্ষণ। তবে সরকার বিলাসী পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছে।’
তিনি আরও বলেন ‘বর্তমানে স্বস্তির জায়গা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার থেকে কমে ৯৮ ডলার হয়েছে। ভোজ্যতেলের দামও কমছে। ফলে দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসবে।’ বাজেট সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, এবার বাজেট সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফকে নমনীয় মনে হয়েছে। শর্তও কম দিচ্ছে তারা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড মহামারির মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করাটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সঠিক ছিল বলেই সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাদর বাজেট সহায়তা দেবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফ কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে বলেছে। তারা বলেছে, কর আদায় না বাড়লে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে না। আমরা বলেছি, এক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।’ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আন্তর্জাতিক কারণেই বেড়েছে। এটা কমে যাবে। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।’
ইআরডির সচিব শরিফা খান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। সুনিদিষ্টভাবে কোনো ঋণ নিয়ে কথা হয়নি। আইএমএফ আমাদের অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে। আমরা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরেছি।’
আইএমএফের মিশনটি ৯ দিনের সফরে গত ১২ জুলাই বাংলাদেশে আসে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইআরডি সচিব ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।