শেয়ার বিজ ডেস্ক:মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর অন্তত এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র আমদানি করেছে। সেই বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির জান্তা। জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর: আল জাজিরা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অধিকাংশ অস্ত্র রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পেয়েছে মিয়ানমারের জান্তা। জাতিসংঘের মিয়ানমার-বিষয়ক মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজের প্রতিবেদনটি গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রকাশ করা হয়।
আমদানির মধ্যে ছিল অস্ত্র, সামরিক-বেসামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি ও অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহƒত উপকরণ। এগুলো ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ক্ষমতা দখলের পর নৃশংস অপরাধের বিষয়ে ব্যাপক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির উপকরণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে গেছে। প্রতিবেদনে ১২ হাজার ৫০০টির বেশি স্বতন্ত্র ক্রয় বা রেকর্ড করা চালান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো সরাসরি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করা দেশটির অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বিপুল পরিমাণ সামরিক পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে, তা বিস্ময়কর। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ড্রোন, যোগাযোগ সরঞ্জাম, নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য উপকরণসহ অস্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানি করেছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে রাজনৈতিক সংকটে পড়ে মিয়ানমার। দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ দমনে নৃশংস দমন-পীড়ন শুরু করে সামরিক জান্তা। এ অবস্থায় দেশের মধ্যেই সামরিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এ জন্য দেশটিতে গঠন করা হয় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে পিডিএফের সঙ্গে যোগ দেয় দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াইরত নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এর মধ্যে অন্যতম ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিরোধীদের দমনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ঘটনা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে বলে মনে করে সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো থেকে ৪০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। চীন-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো ২৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়েছে। একই পরিমাণ অর্থমূল্যের অস্ত্র-সরঞ্জামের উৎস সিঙ্গাপুরে পরিচালিত কোম্পানিগুলো। ভারত ও থাইল্যান্ডের কোম্পানিগুলো থেকেও অস্ত্র কিনেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। ভারত থেকে কেনা অস্ত্রের দাম ৫ কোটি ১ লাখ মার্কিন ডলার। থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।
অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিবেদনে যেসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে রাশিয়া, চীন ও ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৯৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের অস্ত্রসম্পর্কিত বাণিজ্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরাসরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি করা এই অস্ত্রের ক্রেতা যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর সঙ্গে তার এই প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ ভাগাভাগি করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূতের বিরুদ্ধে তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করার অভিযোগ এনেছে রাশিয়া ও চীন। তারা বলেছে, বৈধ অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে অপবাদ দিচ্ছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দূত বলেছেন, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলো বা সরকার নিজেরাই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে বা হস্তান্তর করেছে, এমন কোনো তথ্য তিনি খুঁজে পাননি।