অযৌক্তিক পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন

গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে জনজীবন একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে। প্রতি লিটারে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধর্মঘটের ডাক দেন। ধর্মঘটের কারণে বাস-ট্রাক-ট্যাংকলরিসহ পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন।

বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। ছোট ছোট যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। এতে গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। ধর্মঘটে কাঁচামাল ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়। ঢাকাগামী ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার্থী এবং চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। মালিক-শ্রমিক নেতারা বলছেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত কেন্দ্রীয় নেতারাও। তারা বলছেন, ভাড়া সমন্বয় না করে শুধু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

চাকরি বাঁচাতে চাকরিজীবীরা যে করেই হোক কর্মস্থলে গেছেন। তবে যারা নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে পারবেন না, তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ না করার আহ্বান জানাই। অনেক বাবা বা অভিভাবক বাস কাউন্টারে মেয়েকে নিয়ে বসে বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা যেতে বাস টার্মিনালে এসে জানতে পারেন ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ। এমনই   বিশ্ববিদ্যালয়-সাত কলেজের পরীক্ষা দেয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকটি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাও ছিল গতকাল। অনেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। ধর্মঘটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় চালক-শ্রমিকসহ পরিবহন শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত। ধর্মঘট ডেকেছেন পরিবহন মালিকরা। ধর্মঘট পালন না করে তাদের উপায় নেই। 

পরিবহন মালিকদের দাবি, ‘কোনো কথাবার্তা ছাড়াই হঠাৎ করে লিটারে ১৫ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার তো তেলের দাম বাড়িয়েছে, গাড়িভাড়া বাড়ায়নি। এখন কার কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেবেন তারা।

তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব বিবেচনায় দাম বাড়ানো যৌক্তিক নয়। টোলও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মালিকরা তো ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারেন না। তাদের অস্ত্র কর্মবিরতি, ধর্মঘট! কিন্তু এক দিনে তারা পথে বসতেন না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া নতুন নয়। বলা হয়ে থাকে, আমাদের পরিবহন খাতে বেশি নৈরাজ্য বিরাজমান। পরিবহন মালিকরা সেটিরই প্রমাণ রেখেছেন।

আমরা মনে করি, একতরফা কোনো সিদ্ধান্তই প্রত্যাশিত নয়। গাড়ি পরিবহন ব্যবসায়ীদের আয় উপার্জনের উৎস, পরিবহন ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর চলাচলের বাহন। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয় থাকতে হবে।

বাসভাড়া না বাড়ানো ছাড়া পরিবহন মালিকদের কোনো উপায় নেই। তারা এরই মধ্যে প্রস্তাব দিয়েছেন, যা নিয়ে আগামীকাল বৈঠক আহ্বান করেছে বিআরটিএ। কিন্তু এর মধ্যে ধর্মঘট আহ্বান সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তেলের দাম বৃদ্ধিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তাদের ধর্মঘট কি আত্মঘাতী নয়! দেশের পরিবহন ব্যবস্থা সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল। তাই যৌক্তিকভাবে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের আগে অকারণে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা অমানবিক, যা দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০