অরণ্য ও সাগর ডাকছে

মো. ইমরান হোসেন: সন্ধ্যাটা মনে হয় একটু এগিয়ে এসেছে। দিনের তুলনায় রাত বড়। দুপুরের গরমটাও এখন ভালো লাগে। রোদ যেন তার সেই ভয়ংকর রূপ হারিয়েছে। মাঝে মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও পড়ে। রাতের শুরুটা হয় সিলিং ফ্যান চালিয়ে, কিন্তু রাত গভীর হলে কাঁথার কোনো বিকল্প নেই। নেই সেই তপ্ত গরম। এখনও উঁকি দেয়নি হাড়কাঁপানো শীত। সবুজ অরণ্য কিংবা সাগরের ঢেউয়ের ডাকে সাড়া দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন।

হ্যাঁ, আমি ভ্রমণের কথাই বলছি। দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সঠিক সময় এখন। প্রাকৃতিক দুর্যোগও এই সময়ে কম হয়। গরম কিংবা বেশি ঠান্ডা না থাকায় শারীরের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। হাতে কিছুদিন ছুটি নিয়ে রাজধানীর বাইরে থেকেই ঘুরে আসতে পারেন। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণপিয়াসীদের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় বিভাগে কম-বেশি অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এমনই কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

পতেঙ্গা সৈকত

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পতেঙ্গা সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌ একাডেমি ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটে এই কেন্দ্র। এখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ ভালো। রাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো থাকে। স্থানীয়দের মতে, এখানে সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার খুব সস্তায় পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় সৈকতে চমৎকার ঠান্ডা পরিবেশ বিরাজ করে। সবাই এখানকার মৃদু বাতাস উপভোগ করেন। সৈকতজুড়ে সারিবদ্ধ অনেক পামগাছ আছে। অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা এখানে নোঙর করা থাকে।

কক্সবাজার

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। তাদের আনন্দ-উচ্ছ¡াসে মুখর থাকে সাগরতীর। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, ইনানিতে পাথরের সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ির ঝরনা, ডুলহাজারা সাফারি পার্কসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোয় ঘুরে বেড়াতে পারেন।

সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ

সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। এই দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল, শামুক-ঝিনুক, সামুদ্রিক শৈবাল, গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ, উভচর প্রাণী ও পাখি রয়েছে।

রাঙামাটি

রাঙামাটিকে বলা হয় পাহাড়ের নগর। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদ, যা কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মিত বাঁধের দ্বারা সৃষ্ট। এই হ্রদের স্বচ্ছ ও শান্ত পানিতে নৌকাভ্রমণ অত্যন্ত সুখকর। হ্রদের ওপর আছে ঝুলন্ত সেতু। জেলার বরকল উপজেলার শুভলংয়ের পাহাড়ি ঝরনা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে।

সুন্দরবন

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনভ‚মি গঙ্গা ও রূপসা নদীর মোহনায় অবস্থিত, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিস্তৃত। ২০০ বছর আগে সুন্দরবনের প্রকৃত আয়তন ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার, যা কমে এখন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ সীমানায়। ধারণা করা হয়, সুন্দরী গাছের নামানুসারেই সুন্দরবনের নাম রাখা হয়েছে। এই বনে সুন্দরী গাছ ছাড়াও গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, গড়ান, আমুরসহ ২৪৫টি শ্রেণি ও ৩৩৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে।

কুয়াকাটা

কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত। বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে এর অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার ও বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার। কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই একসঙ্গে দেখা যায়। সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে সৈকতের গঙ্গামতির বাঁকে যেতে হবে। সূর্যাস্তের জন্য যেতে হবে পশ্চিম সৈকতে।

 

জাফলং

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জাফলং। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এর অবস্থান। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এটি। এখানে পাহাড় ও নদীর অপূর্ব মিলন হয়েছে বলে এলাকাটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকির পাহাড়া থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত।

 

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত। এখানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ডু জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান ও চা বাগান।

মাধবকুণ্ডু জলপ্রপাতটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম আদম আইল পাহাড়) কঠিন পাথরে গঠিত। এই পাহাড়ের ওপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বয়ে গেছে। এই  ছড়া থেকে বয়ে আসা জলধারা প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে। বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশে আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০