নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ সব ক্ষেত্রেই তামাক উন্নয়নের অন্তরায়। কিন্তু ২০১৮ সালের কৃষি বিপণন আইনে তামাককে অর্থকরী ফসলের তালিকায় রাখা হয়েছে। তামাক অর্থকরী ফসল হিসেবে উল্লেখ থাকায় আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হলে সরকারের সহায়তায় তামাকের ব্যাপক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটবে। যা দেশে চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই অর্থকরী ফসলের তালিকা থেকে তামাককে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট ও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন। রাজধানীর ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে সংগঠনগুলোর যৌথ আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি ও সবজি মিছিল থেকে বক্তারা এ দাবি জানান। তারা ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে খাদ্যশস্য উৎপাদনে চাষিদের উৎসাহিত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির প্রতিনিধি হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, এইড ফাউন্ডেশনের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিক, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক আতিকা হোসেন, তাবিনাজ প্রতিনিধি মো. রাশেদ প্রমুখ।
গাউস পিয়ারী বলেন, কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, আম উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে। আলু উৎপাদনেও বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। তামাকের পরিবর্তে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক এসব পণ্যের সম্প্রসারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিক গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক তামাক চাষের জন্য কৃষকদের সরাসরি অথবা চুক্তিবদ্ধ উৎপাদন ব্যবস্থার আওতায় ব্যাংকঋণসহ অন্যান্য অর্থায়ন সুবিধা বন্ধে সার্কুলার জারি করেছে। জনস্বাস্থ্য অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাই শিগগিরই তামাককে অর্থকরী ফসলের তালিকা থেকে বাতিল করার দাবি জানাই।
হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, সংবিধানে তামাকের মতো স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং তামাকজাতীয় ফসল উৎপাদন ও চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব বিবেচনায় কৃষি বিপণন আইনে তামাককে অর্থকরী ফসলের তালিকায় রেখে নতুন আইন প্রণয়ন সংবিধান, রাষ্ট্রীয় আইন ও হাইকোর্টের রায় অবমাননার শামিলÑযা সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের গতিশীলতাকে বিঘিœত করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক অর্জন অব্যাহত রাখতে তামাকবিরোধী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো: অনতিবিলম্বে কৃষি বিপণন আইন সংশোধন করে অর্থকরী ফসলের তালিকা থেকে তামাককে বাদ দিতে হবে, ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী তামাক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব ও শেয়ার প্রত্যাহার করতে হবে, দ্রুত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন করতে হবে, তামাক চাষের জমিতে আলাদা ভূমিকর আরোপ করতে হবে এবং খাদ্য উৎপাদনযোগ্য জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, বিএনটিটিপি, আর্ক ফাউন্ডেশন, বিসিসিপি, বিআরডিএস, বাঁচতে শিখো নারী, কারিতাস বাংলাদেশ, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, হিমু পরিবহন, আইডব্লিউবি, কেএইচআরডিএস, নাটাব, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সমিতি, প্রজ্ঞা, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, প্রদেশ, সার্প, তাবিনাজ, টিসিআরসি, উদ্যোগ ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট যৌথভাবে কর্মসূচির আয়োজন করে।