Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:41 pm

অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এসএমই খাতের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশ এসএমই খাতে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এসএমই খাতের বিকল্প নেই। তাই এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকিং ফাইন্যান্সকে সহজতর করা, মার্কেট সম্পর্কে জানতে ও ডকুমেন্টেশন তৈরির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেয়া, এসএমইর জন্য আলাদা সেল বা মন্ত্রণালয় তৈরি করা ও প্রয়োজনীয় পলিসি সাপোর্ট দেয়া প্রয়োজন। এসব করা সম্ভব হলে এসএমই খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।

গতকাল সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত অপরচুনিটিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ ইন দ্য এসএমই সেক্টর শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই

সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, উন্নত দেশগুলোয় বড় উৎপাদকরা ব্যাকওয়ার্ডলিংকেজগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কিনে নেয়। ফলে একই শিল্পে ছোট-বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিনটা তৈরি করে বাকি সব পার্টস বাইরে থেকে তৈরি করে নেয়।

কিন্তু আমাদের দেশে বড়রা ছোটদের সুযোগ দেয় না, তারা নিজেরাই সবকিছু তৈরি করে। অনেক বড় গ্রুপ চানাচুর-মুড়িও তৈরি করেন।

এই বৈষম্য দূর কর করতে ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের অর্থায়ন দরকার। কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাচ্ছেন না। এ খাতে অর্থায়ন এখনও বড় সমস্যা। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে অনেক তহবিল থাকলেও প্রকৃত হকদাররা তা পাচ্ছেন না। যারাই পাচ্ছেন তাদের ইন্টারেস্ট রেটও ১২-১৪ শতাংশ হয়ে যায়।

ব্যাংকঋণ না পাওয়ার পেছনে তিনি অনেক কারণ রয়েছে বলে জানান। এর মধ্যে ব্যাংক যেসব ডকুমেন্ট চায় দক্ষতার অভাবে সেগুলো তৈরি করতে না পারা অন্যতম হলো। দক্ষতার অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশেও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয় বলেও তিনি জানান।

এছাড়া এসএমই খাতের জন্য ১ শতাংশ সোর্সটেক্স রয়েছে, যা থাকা উচিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করছি যাতে সরকার এটি তুলে নেয়। কারণ এসএমই উদ্যোক্তাদের যদি সুযোগ না দেয়া হয় তা হলে দেশের অর্থনীতি বড় হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে এসএমইর কোনো বিকল্প নেই। দেশকে এগিয়ে নিতে এসএমইকে এগিয়ে নিতে হবে। পেছনে ফিরে দেখার সময় নেই, বড় চিন্তা করতে হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহমুদ হোসেন বলেন, এসএমই খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সাইকোলজিক্যাল সমস্যা রয়েছে। একটি ঋণে অনেক কাগজপত্র দরকার হয়। কিন্তু ব্যাংকার, উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে আগ্রহী হন না। দক্ষতার ঘাটতি এর অন্যতম কারণ। এই আগ্রহের ঘাটতিতে এসএমই খাত পিছিয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক এসএমই খাতের জন্য ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেটা অর্জন চ্যালেঞ্জিং।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামির সাত্তার বলেন, এসএমই খাতের জন্য এক্সসেস টু ফাইন্যান্স ছাড়াও এখন বড় চারটি পদক্ষেপ দরকার। এগুলো হলো, মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজকে এসএমই থেকে বের করে দেয়া, যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতকে টেনে তুলতে ট্যাক্স মওকুফ এবং এলসি মার্জিন লেয়ার তৈরিসহ নানা ধরনের সরকারি পলিসি সাপোর্ট দেয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের উপযোগী করে গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া ও আলাদা এসএমই মন্ত্রণালয় তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, এসএমই খাতের জন্য পলিটিক্যাল উইল দরকার, যাতে সরকার এসএমই খাতকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে। কারণ বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো এসএমই ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তারা বেশি দারিদ্র্য বিমোচন করেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এসএমই খাত প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। কারণ অর্থায়নে ঘাটতি আছে এবং সুদ হার বেশি। প্রত্যেক ক্ষেত্রে এসএমই খাত বাধার মুখে পড়ছে। এসএমই খাতের জন্য একটি ইন্ডিজিনিয়াস লোন প্রসেস তৈরি করতে হবে। কীভাবে সহজে ঋণ দেয়া হবে সে জন্য উদ্ভাবনী আইডিয়া দরকার।’

এসএমই খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাজার প্রবেশাধিকার সহজ করতে হবে। অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে এসএমই উদ্যোক্তারা মার্কেটে ঢুকতে পারে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা উদ্যোক্তাদের বড় হতে দেয় না। প্রকৃত উদ্যোক্তারা তাদের জন্য বাজারজাত করতে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

এছাড়া কমপ্লায়েন্স বাড়াতে হবে। সামনে অনেক অপরচুনিটি রয়েছে, সেগুলো ধরতে হলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এসব কিছুর জন্য উদ্যোক্তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ফেসবুকের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের চুক্তি হয়েছে। ফেসবুক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের মার্কেটিং, প্রচারণা করতে পারেন।