এম এ মাসুম: নারী শ্রমবাজারের প্রভাব নিয়ে মানুষের বোঝাপড়ার উন্নয়ন ঘটানোর স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন। তিনি নারীদের উপার্জন এবং এ শতাব্দীতে শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণের ফলাফল বা প্রভাব নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশদ ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। বিশ্বে তৃতীয়তম নারী হিসেবে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন। নারী হিসেবে গোল্ডিনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এলিনর অস্ট্রম ২০০৯ সালে এবং ফ্রান্সের এস্তেডর দুফ্লো ২০১৯ অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন।
ক্লডিয়া গোল্ডিন ১৯৪৬ সনের ১৪ মে জš§গ্রহণ করেন। তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রম অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপক গোলডিন ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন কয়েক বছর। তিনি জাতীয় অর্থনৈতিক গবেষণা কার্যালয়ের অর্থনীতিতে লিঙ্গ বিষয়ক গবেষণা দলের সহ-পরিচালক। তিনি ১৯৮৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকান ইকোনমি প্রোগ্রাম উন্নয়নের পরিচালক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন, যাদের মধ্যে নারী শ্রমশক্তি, আয়ে লিঙ্গগত বৈষম্য, আয় বৈষম্য, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, শিক্ষা ও অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। তার বেশিরভাগ গবেষণাকর্মে অতীতের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমানকে অবলোকন ও ব্যাখ্যা করা হয় এবং বর্তমান উদ্বেগজনক বিষয়গুলোর উৎস অনুসন্ধান করা হয়।
শ্রমবাজারে নারীর অবদান নিয়ে তার গবেষণায় নতুন দিকনির্দেশনা, পরিবর্তনের চিত্র ও বিদ্যমান লিঙ্গ পার্থক্যের মূল উৎস বা কারণগুলো উঠে এসেছে। বৈশ্বিক শ্রমবাজারে এখন পর্যন্ত নারীদের অবদানের তথ্য সেভাবে উঠে আসে না। পুরুষদের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে মজুরিও কম পান তারা। ৭৭ বছর বয়সী গোল্ডিন এ বিষয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করেছেন; দেখিয়েছেন লিঙ্গ পার্থক্য কীভাবে আয় ও কাজের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে। এর কারণও তুলে ধরেছেন তিনি। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তারা পুরুষদের চেয়ে আয়ও করে কম। বিষয়টি নিয়ে গোল্ডিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০০ বছরের ডেটা সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান চালিয়েছেন। আর্কাইভগুলো তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে দেখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন উপার্জনের ক্ষেত্রে সময়ের পরিক্রমায় কীভাবে ও কেন লিঙ্গ বৈষম্য ও পার্থক্য গড়ে উঠেছে নারী-পুরুষের মধ্যে। নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের হারও কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সেটিই খুঁজে দেখেছেন এই অধ্যাপক।
গোল্ডিন দেখিয়েছেন, শতাব্দী ধরে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। বরং এটি ছিল উল্টো প্রকৃতির। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কৃষি থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরের সময়ে কর্মক্ষেত্রে বিবাহিত নারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তারপর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেবা খাতের বৃদ্ধির সঙ্গে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গোল্ডিন এ প্যাটার্নকে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং ঘর ও পরিবারে নারীর দায়িত্ব সম্পর্কিত সামাজিক রীতির বিকাশের ফলাফল হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিংশ শতাব্দীতে নারীদের শিক্ষার হার ক্রমাগত বেড়েছে এবং উচ্চ আয়ের বেশিরভাগ দেশগুলোতে এখন পুরুষদের তুলনায় নারী শিক্ষার যথেষ্ট বেশি। এই ক্ষেত্রে গোল্ডিন দেখিয়েছেন, ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নারীদের গর্ভনিরোধক পিল তাদের নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
ক্লডিয়া গোল্ডিনের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার মূল বিষয় হচ্ছে, আগে এবং এখনও নারীর সিদ্ধান্ত মূলত তার বিয়ে ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করলেও তার অন্তর্দৃষ্টি কাল-সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে যায়। এই গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং।
কারণ এক সময় সরকারি পরিসংখ্যানে শুধু পুরুষদের কাজের তথ্য-উপাত্ত থাকত, নারীদের থাকত না। ফলে আর্কাইভে তাকে রীতিমতো ‘তথ্য গোয়েন্দা’র ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করে আর্কাইভের বিপুল তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে তাকে নারীর ভ‚মিকা বের করতে হয়েছে।
সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ক্লডিয়া গোল্ডিন ২০০ বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণায় দেখেছেন, এই সময়ে শ্রমশক্তিতে নারী অংশগ্রহণ শুধু বেড়েছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়, বরং এ-বিষয়ক রেখাচিত্র ইংরেজি ইউ আকৃতির। অর্থাৎ এই ইতিহাস সরলরৈখিক নয়। দেখা গেছে, ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কৃষিজীবী থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরের সঙ্গে বিবাহিত মহিলাদের অংশগ্রহণ হ্রাস পায়, কিন্তু তারপর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেবা খাতের বৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। গোল্ডিন এই প্যাটার্নটিকে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং গৃহ ও পরিবারের জন্য নারীর দায়িত্ব সম্পর্কিত সামাজিক নিয়মের বিকাশের ফলাফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, বিংশ শতাব্দীতে, নারীদের শিক্ষার মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশির ভাগ উচ্চ আয়ের দেশে তারা এখন পুরুষদের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। অধিকাংশ উচ্চ আয়ের দেশে নারীর শিক্ষার মান পুরুষের চেয়ে বেশি।
গোল্ডিন দেখিয়েছেন, গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহার নারীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য নতুন সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। এটা নারীকে ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা করার সুযোগ দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে এত পরিবর্তন সত্তে¡ ও কিছু পুরোনো বিষয় এখনও রয়ে গেছে, বলেছেন ক্লডিয়া গোল্ডিন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নারী-পুরুষের আয়ের ব্যবধান তেমন একটা কমছে না। অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন মনে করেন, আয়ের বৈষম্যের আংশিক কারণ হচ্ছে, শিক্ষাবিষয়ক সিদ্ধান্ত সাধারণত কম বয়সে নেয়া হয়। তিনি বলেন, যদি যুবতী মহিলাদের প্রত্যাশাগুলো পূর্ববর্তী প্রজšে§র, যেমন তাদের মায়েরা যাদের শিশুরা বড় না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরে যাননি, অভিজ্ঞতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ফলে বিকাশ আরও ধীর হয়।
ক্লডিয়া গোল্ডিনের মতে শ্রমবাজারে বিশ্বব্যাপী নারীদের ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হয়। আয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম উপার্জন করেন। তিনি এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করে দেখিয়েছেন, কেন ও কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয় ও কর্মসংস্থানে নারী-পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যের পরিবর্তন ঘটে। আয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গপার্থক্যের সঙ্গে শিক্ষা ও পেশাগত পছন্দের সম্পর্ক রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, উপার্জনে জেন্ডার বৈষম্যের বেশির ভাগই শিক্ষা এবং পেশাগত পছন্দের পার্থক্য দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। গোল্ডিন দেখিয়েছেন যে, এই উপার্জনের পার্থক্যের বেশির ভাগই এখন একই পেশায় হয় এবং মহিলাদের মধ্যে যা মূলত প্রথম সন্তানের জšে§র সময় স্পষ্ট হয়।
ক্লডিয়া গোল্ডিনের গবেষণা কর্মগুলোর মাধ্য বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীদের অবস্থান কেমন তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভ‚মিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি নির্মাণে নারীর ভ‚মিকা কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে পুরুষের তুলনায় দুর্বল গণ্য করে। যে কারণে বাংলাদেশেও কর্মক্ষেত্রে নারী যথাযথ আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার জনে। বিবিএসের এ হিসাব কতটুকু সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। এর মধ্যে একটি বিরাট অংশ শিক্ষিত বেকার। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী এ সময়ে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৪২.৬৮ শতাংশ; যা পাঁচ বছর আগেও এটি ছিল ৩৬.৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে নারীর শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান হ্রাস ও গ্রামাঞ্চলে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে শিল্পায়নের প্রসার, কর্মক্ষেত্রের পরিসর বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও জীবনযাত্রার ধারাবাহিক ব্যয় বৃদ্ধি, কভিড-পরবর্তী প্রভাব ও মূল্যস্ফীতির কারণে নারীরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে গার্মেন্ট ও উৎপাদন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ কমায় শহর এলাকায় নারী শ্রমশক্তি কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) ভাষ্য অনুযায়ী, আগে গার্মেন্ট ও অন্যান্য উৎপাদন শিল্পে নারী শ্রমিকরাই কাজ করতেন। আশির দশক থেকে শুরু করে চলতি শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত নারীর কর্মসংস্থান বেশি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার যতটা বেড়েছে, তত বেশি নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমে পুরুষ শ্রমিকের আধিক্য তৈরি হচ্ছে। সাধারণ কাজেও পুরুষ শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আশির দশকে গার্মেন্ট খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৯০ শতাংশ থাকলেও এখন তা ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে, সে অনুযায়ী বেতন বাড়েনি, যে কারণে তরুণীরা শহরে কাজ করতে আর আগ্রহ পাচ্ছেন না। আবার শহর এলাকাগুলোয় নারীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে শ্রমবাজারে তাদের উভয়ের অংশগ্রহণ সমান হারে হতে হবে। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার এখনও অনেক কম।
শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের হার তুলনা করলে দেখা যায়, নারীরা এখনও শ্রমবাজারে অনেক কম সংখ্যায় আসছে। বেশিসংখ্যক নারী ঘরে-বাইরে বেতনভুক কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে বেকারত্ব ও অর্ধবেকারত্বের হার কমে আসছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নারীর কাজের সুযোগ ও চাহিদা দুটোই বেড়েছে। সেই সঙ্গে নারীশিক্ষার হার বাড়ছে এবং উচ্চশিক্ষায়ও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে কিছু আবশ্যকীয় কারণ এক্ষেত্রে ভ‚মিকা পালন করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমে বাড়ছে। একক আয়ে পারিবারিক চাহিদাগুলো মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই নারীরা কম আয়ের কাজ হলেও সেগুলোয় নিয়োজিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের এবং নিচু পর্যায়ের কাজগুলোয় অংশ নিচ্ছে। তৈরি পোশাক খাত থেকে শুরু করে প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা, করপোরেট খাত প্রভৃতির বেলায়ও এটি লক্ষণীয়।
নারীদের জন্য দেশব্যাপী আরও বেশিসংখ্যক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। সেগুলোয় তারা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য নিরাপদ থাকা ও চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মরত নারীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে নিয়োগকারীদের। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বেশি আয়ের কাজগুলোয় নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারছে না বলে তাদের আয় বাড়ছে না। অন্যদিকে কৃষি খাতের অবদান কমে আসার কারণে কাজের সুযোগও কমে আসছে। সেখানে প্রথমে নারীরাই সেই সুযোগটি হারাচ্ছে। গ্রামীণ অকৃষিজ অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। স্ব-নিয়োজিত নারীদের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় এক-চতুর্থাংশ নারী নিজেই কোনো উদ্যোগ নিয়ে আয় বর্ধনকারী কাজে নিয়োজিত। তাদেরও নতুন নারী উদ্যোক্তাদের মূলধন ও অন্যান্য নীতি সহায়তা দিতে হবে। সংগঠিত ও উচ্চ আয়ের পেশাগুলোয় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং তাদের ধরে রাখার জন্য ব্যক্তি খাতকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
নিয়োগকারীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আগামী দিনের অর্থনীতি হবে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে অনেক ধরনের শ্রমের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে। যাদের দক্ষতা থাকবে না, তারা শ্রমবাজার থেকে ঝরে পড়বে। নারীদের জন্য এটি হবে বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, যেহেতু তারা প্রযুক্তিগত দক্ষতায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই তাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ব্যাংকার ও মুক্ত লেখক
ma-masum@yahoo.com