নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হতে পারে কৃষিভিত্তিক ব্যবসা, ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা ও ই-কমার্স এবং সবুজে অর্থায়ন। এ জন্য সব খাতেই প্রযুক্তির সম্প্রসারণে যেতে হবে। বর্তমান কৃষিকে কৃষি বাণিজ্যে পরিণত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও করপোরেট প্রধানরা।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানদের ব্যবসায়িক সংঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসি)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সেমিনারে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরা হয়। পৃথক দুটি সেশনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অতিথিরা। ‘ব্রান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘মাতারবাড়িসহ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে বাংলাদেশের। জাপান সরকারেরও বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশেই সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বিশ্বের দর বাড়ে তুলে ধরতে পারলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে। এজন্য সরকারের নীতিসহায়তাগুলো টেকসই হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের একটি ভালোমানের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে পারলে আরও ভালো করা সম্ভব।’
কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং কিউন বলেন, ‘খুব অল্পসংখ্যাক রাষ্ট্রের পারমাণবিক বিদ্যুৎ শক্তি রয়েছে। বাংলাদেশও সেদিকে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য ব্রান্ডিং হতে পারে। তৈরি পোশাক খাতও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানেই ভবিষ্যৎ রয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতিগুলো সফলতা পেলে আরও এগোতে পারবে বাংলাদেশ।’ নেদারল্যান্ডসের ঢাকাস্থ দূতাবাসের উপ-প্রধান পাউলা রোজ সিন্ডেলার বলেন, ‘অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেদিকগুলোই কাজে লাগানো প্রয়োজন।’
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশ এখন বিনিয়োগ উপযোগী রয়েছে। আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনে সব ধরনের সেবা সহজ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিজ উদ্যোগেই আমরা এসব করছি।
থ্রি গ্রোথ ড্রাইভার্স বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি উম্মোচন করেন সিটিব্যাংক-এনএ’র কান্ট্রি অফিসার এন রাজাশেকারন এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। গবেষণা প্রতিবেদনটির মতে, বাংলাদেশের উন্নতির পেছনে বেসরকারি খাতের সংযুক্ততা বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, অর্থনৈতিক উদার নীতি, বাণিজ্য একীভূতকরণের মতো নানা কারণ জড়িত। এর ওপর ভিত্তি করেই ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। এজন্য উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘থ্রি গ্রোথ ড্রাইভার্সের এই রোডম্যাপ দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি, বিদেশি বিনিয়োগ আনা ও প্রতিটি খাতে অর্থনৈতিক উন্নতিতেও সহায়ক হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই খাতগুলোই আমাদের সাফল্যে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এফআইসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের গবেষণাপত্রটি সব রাষ্ট্রীয় দপ্তরে পৌঁছানো প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সক্ষম, যেমন বিপুল-সংখ্যক তরুণ ও দক্ষ ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, রপ্তানি উপার্জন বৃদ্ধি করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখা, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বিকাশের সম্ভাবনা উম্মোচন করা এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কাজ করা।
এফআইসিসিআই সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত এফআইসিসিআই। আমাদের প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে সরকারকে জাতীয় বাজেট প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এর কারণ শুধু রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোই নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করাও সম্ভব।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন এফআইসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএইচএম ফাইরুজ, গ্রামীণফোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসের এজাজ, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এফআইসিসিআইয়ের নির্বাহী সদস্য ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, এফআইসিসিআইর নির্বাহী কমিটির সদস্য, ফআইসিসিআইর নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।