দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের পুঁজিবাজার বাড়ছে না। কারণ ২০১০ সালে আমাদের বাজার মূলধন ও জিডিপির অনুপাত ছিল ৫০ঃ৩৩। বর্তমানে তা কমতে কমতে চলে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে। প্রতিনিয়ত এটি কমছে। অথচ এটা বাড়ার কথা। এতে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার এগোতে পারছে না। কাজেই অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারকে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আনিসুর রহমান, এফসিএ। এএফসি ক্যাপিটালের এমডি মাহবুব এইচ মজুমদার, এফসিএমএ এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. এমরান হাসান।
মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা জানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেট ক্যাপিটাল এখন ৪২ বিলিয়ন ডলার, যা এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। অন্যান্য দেশের মার্কেটের তুলনায় আমাদের দেশের বাজার এত নিচে পড়ে আছে যে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া আমাদের দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) তুলনায় মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের অবস্থাও ভালো নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের জিডিপির তুলনায় মার্কেট ক্যাপিটাল ৮৬ ও ৩৬ শতাংশ এবং এশিয়ার কিছু দেশের প্রবৃদ্ধি আরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে ২০ শতাংশেরও কম। এতে বোঝা যায়, দেশের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি হওয়ার কত সুযোগ রয়েছে। কাজেই বাজারসংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ব্যাংকের যে উত্থান হয়েছে, এটি কি স্বাভাবিক গতিতে হয়েছে, নাকি পলিসি পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে একটি আইন পাস হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে, আগে প্রতিটি ব্যাংকে একই পরিবারের দুজন ডিরেক্টর হতে পারতেন এখন চারজন ডিরেক্টর হতে পারবেন এবং ছয় বছরের জায়গায় ৯ বছর ডিরেক্টর থাকতে পারবেন। আর ব্যাংক আইনের সংশোধন হওয়ায় অবশ্যই ডিরেক্টরদের বেশি করে শেয়ার সংগ্রহ করার প্রবণতা থাকবে। যে কারণে ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ছে।
মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে এখনও অনেক কাজ করার আছে। বাজারে আরও কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা দরকার। অনেক ডেরিভেটিভ আনতে হবে। বাজারে অনেক প্রডাক্ট থাকা দরকার। আমাদের মার্কেট শুধু ইক্যুইটি বেজড। যে কারণে বাজারের আয়তন ছোট হয়ে আছে। দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার বাড়ছে না। ২০১০ সালে আমাদের মার্কেট ক্যাপিটাল এবং জিডিপির অনুপাত ছিল ৫০ঃ৩৩ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে হয়েছে ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে তা কমতে কমতে চলে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে। প্রতিনিয়ত এটি কমছে। অথচ এটা বাড়ার কথা। এতে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার এগোতে পারছে না। আর অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারকে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। ব্যাংকে বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এখনও ১৩টি ব্যাংকের পিই রেশিও ১০-এর নিচে আছে। আমি মনে করি এখনও এ খাতের অনেক শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। কাজেই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এবং খুব স্বাভাবিক গতিতেই বাড়ছে ব্যাংক খাত।
মো. এমরান হাসান বলেন, ব্যাংক খাত যখন বাড়তে শুরু করেছিল, তখন প্রথম দিকে সবাই সন্দেহ করেছিল এ উত্থান থাকবে কি না, তা নিয়ে। কারণ স্বাভাবিকভাবে এ সময়টিতে ব্যাংকের উত্থান হয় না। যখন ব্যাংকের এ উত্থান একটি টেকসই পর্যায়ে চলে গেল, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ শুরু করল। আর সবার যেহেতু পুঁজি সীমাবদ্ধ তাই পুঁজি জোগাতে অন্য শেয়ার বিক্রি করে তারা ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ করে। আর জুন ক্লোজিংয়ের শেয়ারগুলো হয়তো তাদের সংগ্রহের তালিকায় ছিল। যে কারণে অন্যান্য খাতের শেয়ারদর কমতে থাকে। আর এ কারণেই হয়তো অন্যান্য খাতের সংশোধন আমরা লক্ষ করেছি।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম