Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:34 pm

অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার সমান্তরাল গতিতে দেখতে চাই

পুঁজিবাজার মোটেই ভালো অবস্থানে নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে। ২০২১ সালে দেশের অর্থনীতিকে যে অবস্থানে দেখতে চাই, পুঁজিবাজারকেও সেই অবস্থানে দেখতে চাই। বর্তমানে যারা পুঁজিবাজারের পলিসি মেকার তাদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর মধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী আছেন বলে মনে হয় না। আবার মিউচুয়াল ফান্ডেও দৈন্যদশা বিরাজ করছে। অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ডে কেউ বিনিয়োগ করেন না। আর প্রতিবেশী দেশে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য তাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দেওয়া হয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সালাউদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ এবং লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের হেড অব বিজনেস এসএম নাসির উদ্দিন।
সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাজার টানা পতনে রয়েছে। মাঝে মধ্যে বাজার এক থেকে দুদিন বাড়ে। কিন্তু একদিন বা দুদিন বাড়লে পরের দিন ওই দুদিনে যা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি কমে যায়। আসলে বাজার স্বাভাবিক অবস্থানে নেই। এ রকম বাজার বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। আবার ২০১০ সাল থেকে বাজারের সূচক পাঁচ হাজারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ছয় হাজারে উঠলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সূচক কমেই যাচ্ছে। সবাই প্রত্যাশা করেছিল নির্বাচনের পর বাজার ভালোর দিকে যাবে। জানুয়ারিতে তেমন গতিও লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এখন বাজারের অবস্থা দেখে তা মনে হচ্ছে না। আবার জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচক ছিল। কিন্তু মার্চ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতো আচরণ করছে। এটা আসলে বাজারের জন্য ভালো নয়। অর্থনীতির উন্নয়নে মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেট বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ভালো অবস্থানে নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, আসলে বাজার মোটেই ভালো অবস্থানে নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে। যেমন ২০২১ ও ২০২৫ সালে দেশের অর্থনীতি যে অবস্থানে দেখতে চাই, পুঁজিবাজারকেও সেই অবস্থানে দেখতে চাই। বর্তমানে যারা পুঁজিবাজারের পলিসি মেকার রয়েছেন, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বাজারে মাত্র ৩১৩টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোট বিনিয়োগকারী রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ। ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর মধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী আছে বলে মনে হয় না। আবার মিউচুয়াল ফান্ডেও দৈন্যদশা বিরাজ করছে। অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ডে কেউ বিনিয়োগ করে না। আর ভারতে ৪০৫৮টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী প্রায় চার কোটি ৫৭ লাখ। সেকেন্ডারি মার্কেটসহ মিউচুয়াল ফান্ডে পাঁচ কোটি ২০ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছে। আর সেখানে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এমনকি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য তাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বাজার কীভাবে ভালো হবে। শুধু আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের কারণে বাজার খারাপ হচ্ছে, এটা বললে ভুল হবে। ভারতের বাজারে মোট বিনিয়োগকারীর ৯ শতাংশ বিদেশি। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী রয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ যখন বাজার খারাপ অবস্থানে থাকে তখন ওই মিউচুয়াল ফান্ড বাজারটাকে স্থিতিশীল অবস্থানে রাখে। কিন্তু দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের তেমন ভূমিকা দেখি না। বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেক হতাশা রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত বাজারকে ঢেলে সাজানো না যাবে ততদিন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের হতাশা থাকবেই। দিন দিন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে। অর্থাৎ বাজার ভালো করতে ভালো কোম্পানির আনার কোনো বিকল্প নেই।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ