Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:24 pm

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা বাস্তবায়নে গতি বাড়ান

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রথম দফায় সরকার মোট ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করে। এসব প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ৯টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। বছর শেষে এসব প্যাকেজের সার্বিক বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদন ‘আদায় আশঙ্কায় ব্যাংক খাত: গতি নেই দ্বিতীয় মেয়াদের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ওই বাস্তবতাই প্রতিফলিত হয়েছে।

দেশের অর্থনীতিতে কভিডের প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। রপ্তানিমুখী সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজ সবার কাছে পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পেতে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কভিডকালে সহায়ক ভূমিকা রাখছে, তাতে সংশয় নেই। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা-সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, প্রণোদনার ঋণ আদায় আশঙ্কায় রয়েছে তারা। অথচ এসএমই এবং কুটির শিল্পের চলতি মূলধন ঋণ বাস্তবায়ন করা গেলে কভিডকালে যারা ব্যবসা হারিয়েছেন, তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন। এটি ঠিক, অধিকাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমাদের ব্যাংকাররাও যেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে আগ্রহী নন।

আমাদের ব্যাংকগুলো প্রকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছাতে পারে না। মনে রাখতে হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতেই প্রণোদনার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা কভিডকালে পুঁজি হারিয়েছেন। ঋণ প্রাপ্তির কঠিন শর্তের কারণে বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তা ঋণ-প্রণোদনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাদের শুধু ঋণ নয়, নীতি সহায়তা দিতে হবে। তাহলেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকলেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রণোদনার অর্থ যথানিয়মে বিতরণ করা হলেই সুফল পাবেন ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ উদ্যোক্তা। তাই প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, প্রণোদনার অর্থ আদৌ শিল্প খাতে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আশার কথা, প্রণোদনা বাস্তবায়নে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। সাধারণত ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেই সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এর বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা। কিন্তু ব্যাংক থেকে সবাই ঋণ পান না। ব্যাংকগুলো এখন আদায়ের কথা ভেবে ঋণ আদায়ে গড়িমসি করছে। স্বাভাবিক সময়ে যারা অনেকটা উপযাজক হয়ে ঋণ দিতে চাইতেন, তারা এখন আদায়ের কথা ভাবছেন। ফলে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গতি আসছে না। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবেই প্রণোদনা প্যাকেজের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।