নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য বড় বিনিয়োগ দরকার। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বাড়তি প্রায় ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার মাধ্যমে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্যও বড় অর্থায়ন দরকার হবে। এসব অর্থায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে একটি মিশ্র অর্থায়ন প্রক্রিয়া (ব্লেন্ডেড) ফাইন্যান্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ মিশ্র অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় সরকারে অর্থায়ন উদ্যোগের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্ত হবে বেসরকারি খাত, পুঁজিবাজার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল ‘বাংলাদেশে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মিশ্র অর্থায়নের ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এ কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) অধ্যাপক ড. কাউসার আহাম্মদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
গবেষণা প্রতিবেদনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত দশকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে কভিড-১৯ সংক্রমণের পর অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ে। এ চাপ থেকে উত্তরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোয় অর্জনের জন্য বেশকিছু মাইলস্টোন নির্ধারণ করেছে। এসব মাইলস্টোনের মধ্যে রয়েছে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়া। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডা এসডিজি অর্জনের জন্য প্রয়োজন সবুজ প্রবৃদ্ধি। এছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক উৎস থেকে বাংলাদেশের সহজ শর্তের অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ কমে আসবে। এমন পরিস্থিতিতে টেকসই সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সিং বা মিশ্র অর্থায়ন কাঠামো কার্যকর করা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, মিশ্র অর্থায়ন বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন ধারণা। কাজেই এ ধারণাটিকে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে পরিচিত করে তুলতে এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।
ব্লেন্ডেড অর্থায়নের ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু পরামর্শ দিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, মিশ্র অর্থায়নের জন্য বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু ব্যক্তি খাতকে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা না দিলে তারা আগ্রহী হবে না। সেজন্য বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বলেন, পরিবেশ উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অনুদানের সুবিধা কমে যাবে। দেশের পরিবেশ উন্নয়ন এবং এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রিন বন্ড ও ব্ল–বন্ডের মতো ইনস্ট্র–মেন্ট চালু করতে হবে। পাশাপাশি পুঁজি বাজারকেও অর্থায়নের উৎস হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সরকার এরই মধ্যে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারপ্রধান বারবার পরিবেশ-প্রকৃতির ক্ষতি না করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। এসব উদ্যোগ সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাউসার আহাম্মদ বলেন, সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সৌরশক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল এবং এখান থেকে বিনিয়োগের রিটার্ন উঠিয়ে আনা সম্ভব নয়। কাজেই এসব ক্ষেত্রে ওইসিডিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।