Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:01 pm

অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক নীতিমালা দ্রুত সংস্কার ও তা কার্যকরের ওপর জোরারোপ করেন তারা। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। গতকাল ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা: চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলে ওই সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক, এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বিশেষ অতিথি ছিলেন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, দেশের সক্ষমতার ওপর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো অনেকাংশে নির্ভর করে। তিনি বলেন, গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ সূচক অনুযায়ী, পৃথিবীর ১৪১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম, যেখানে সিঙ্গাপুর প্রথম স্থানে রয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ডুয়িং বিজনেস সূচক অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম।

তিনি বলেন, অবকাঠামো খাতে সরকার গৃহীত ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে। তবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বেকারত্ব ও অদক্ষতা, বাণিজ্যিক নীতিমালার সংস্কারের ধীরগতি, জলবায়ু পরিবর্তন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণের অপারগতা সর্বোপরি শিল্প খাতের অবকাঠামো স্বল্পতার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে।

বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নয়নে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকাণ্ড যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যবসা পরিচালনার সূচকে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাবে।

তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কারের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ; এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য তিনি ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিযোগী সক্ষমতায় টিকে থাকার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।   

বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দ্রুততর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার আন্তঃসমন্বয় আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন।

আনির চৌধুরী দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব। তিনি জানান, সরকার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষিত যুবকদের আইওটির ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। 

আহসান খান চৌধুরী বলেন, প্রতিটি শিল্প খাতের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতপূর্বক আমাদের অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে জিডিপিতে রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ কমেছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক নীতিমালা দ্রুত সংস্কার ও তা কার্যকরের ওপর জোরারোপ করেন। বিশেষ করে, তিনি দ্রুততার সঙ্গে মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি মনে করেন, বৃহৎ পরিমাণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল মূল নির্ণায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।