Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:06 pm

অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, আর্থিক নিরাপত্তা ও স্বর্ণের রিজার্ভ

 

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ: দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন হার বাংলাদেশের’ শীর্ষক খবরটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের আনুমানিক প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ রয়েছে স্বর্ণে; বাকি ৯৮ শতাংশের বেশি রয়েছে ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রায়। খেয়াল করার মতো বিষয়, রিজার্ভে স্বর্ণের এ সঞ্চিতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমানে এ অঞ্চলে সর্বাধিক স্বর্ণ রিজার্ভ রয়েছে শ্রীলঙ্কার; দেশটি মোট রিজার্ভের ১৭ দশমিক ৯ শতাংশই সংরক্ষণ করছে স্বর্ণে। তার বিপরীতে বাংলাদেশের ১ দশমিক ৯ শতাংশ কিন্তু নেপালের ২ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়েও কম। লক্ষণীয়, একসময় সব দেশেই জাতীয় রিজার্ভের বিপরীতে সংরক্ষণ করা হতো সমমূল্যের স্বর্ণ। পরে ধীরে ধীরে স্থানটি দখল করে কাগুজে মুদ্রা, বিশেষত ডলার ও ইউরো। তবু প্রায় সব দেশই যৎসামান্য পরিমাণে হলেও স্বর্ণে সংরক্ষণ করে রিজার্ভ। এক্ষেত্রে অবশ্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সেজন্যই স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের স্বর্ণ রিজার্ভ হ্রাসে কোনো ঝুঁকি দেখছেন না। সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথাও বলেছেন যে, অন্তত তার সময়ের চেয়ে স্বর্ণে রিজার্ভের হার এখন বেশি। আরেক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুরের মতে, স্বর্ণে রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম। আর এক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো যথেষ্ট আস্থাদায়ক। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করা কঠিন এবং তদানুসারে ও আপাতদৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বর্ণ রিজার্ভের হার কম হওয়াটাও আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার নয়।

তবু এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া দরকার। প্রথমত, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা যুগোপযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি হুমকি যে বাড়ছে, তার বড় প্রমাণ গত বছর সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকিং। তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফতুর হয়ে গেছে বা তার চলতে কষ্ট হচ্ছে, সে কথা বলবেন না কেউ। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না, ওই ঘটনা ততোধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে জনমনস্তত্ত্বে। আমরা জানি, হ্যাকিংয়ের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক আর্থিক নিরাপত্তা চ্যানেলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে; যদিও তা যথেষ্ট কি না জানা যায় না। অথচ একবিংশ শতাব্দীর এ যুগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও বেশি করে উচিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট কারিগরি নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি উপযুক্ত মনোযোগ দেওয়া। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টসের (বিআইএস) সহায়তাও চাওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন-বিরোধী নানা বক্তব্য দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, সত্যি সত্যিই ওসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে কিন্তু বিশ্বায়িত বাণিজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সর্বাধিক। এখন কথা হলো, বাণিজ্যিক বিশ্বায়নে স্বর্ণ রিজার্ভ তেমন কাজে আসেনি; বরং তার উত্তম বিকল্প মিলেছে একাধিক। ট্রাম্পের প্রভাবে যদি বিশ্বায়িত বাণিজ্য সামান্যও প্রভাবিত হয়, তা স্বর্ণ রিজার্ভের হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর আদৌ কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি এখন থেকেই ভেবে দেখা উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।