শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাপান সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ আশা করছে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরও জাপান বাংলাদেশকে দেওয়া প্রযুক্তি, লিগ্যাল ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
গতকাল মঙ্গলবার টোকিওতে জাপানের ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিমন্ত্রী হিরোশিগে সেকোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৬ সালে ঢাকায় হোটেল হলি আর্টিজানে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সাত জাপানি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে কোনো সন্ত্রাসী ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি
পালন করছে।
বাংলাদেশ এখন অনেক নিরাপদ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী জাপানি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের ভ্রমণের আহবান জানান।
গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাপানের মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নে জাপান খুশি। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরও জাপান বাংলাদেশকে দেওয়া বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা ঢাকার জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে এখন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। জাপানি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। এখানে জাপানের বিনিয়োগকারীরা স্মার্ট টেকনোলজি, ব্লু ইকোনমি, হাই-টেক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট, টেক্সটাইল, এগ্রো প্রসেসিং প্রডাক্ট, অটোমোবাইল, আইসটি এবং জুট প্রডাক্ট খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে ১৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ৪০টি প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। জাপান বাংলাদেশকে অনেক পণ্য রফতানিতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান
করছে। ফলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি বাড়ছে।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাপানে রফতানি করেছে ১০১২ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমদানি করেছে ১৮৩৩ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। জাপান বাংলাদেশকে চামড়ার হ্যান্ড গ্লোবসসহ আরও কিছু পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলে জাপানে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি আরও বাড়বে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জাপানের ৩১২টি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, এখানে প্রায় ৪২ হাজার জনবল কাজ করছে। এখানে জাপানের বিনিয়োগ প্রায় ১,৪৬৭ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে ২০১৭ সালে ডিরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) হয়েছে ৭০ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার। জাপানি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন, উন্নতমানের পোশাক তৈরি এপিআই এবং লেদার পণ্য তৈরি খাতে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের উদ্যোগে বিজনেসম্যান টু বিজনেসম্যান (বিটুবি) বৈঠকে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) প্রেসিডেন্ট ইয়াশুশি আকাহোশির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতেমা, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান, এলএফএমইএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাজমুল হাসান, বিজিএমইএ’র পরিচালক মুনির হোসেন, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আযম উপস্থিত ছিলেন।

Print Date & Time : 30 June 2025 Monday 3:44 am
অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: