বেনাপোল কাস্টমস

অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৯০০ কোটি টাকা

প্রতিনিধি, বেনাপোল : দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে ক্রমেই কমে আসছে রাজস্ব আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তবে পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে বেড়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে রাজস্ব আদায় কিছুটা কমতে পারে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। ৯০ একর জমির ওপর বেনাপোল স্থলবন্দরের অবস্থান। ৫৯ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ বন্দরে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টন পণ্য ওঠানামা করে। ৩০টি সাধারণ ও দুটি রাসায়নিক ওয়্যারহাউস (গুদাম), সাতটি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, দুটি ট্রাক টার্মিনাল, একটি রপ্তানি টার্মিনাল থাকলেও বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে আটটি ওয়্যারহাউস ভেঙে বড় দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বন্দরের অবকাঠামো সংকট, অব্যবহƒত ওয়্যারহাউস ও শেড, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতির তীব্র সংকট আর বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে পণ্যজটকে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ পণ্যজট। জায়গার অভাবে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকে দিনের পর দিন।

বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ভারত থেকে ৪০০ ট্রাক আমদানি পণ্য আসে। অন্যদিকে বেনাপোল বন্দর থেকে ২৩০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। কাস্টমসের কার্যক্রম অটোমেটেড হলেও বন্দরের সনাতন পদ্ধতির কারণে সেবাগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে।

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে এ বন্দর দিয়ে। ফলে রাজস্বে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করেছি।

দুবছর ধরে কাস্টম হাউস বেনাপোলে কাজ করেছি, যদিও সম্প্রতি বদলি হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। যোগ দেওয়ার পরপরই বেনাপোল উন্নয়নে বাইপাস সড়ক চালু করে সড়ক দিয়ে ৬৫ শতাংশ পণ্য খালাস করা হয়। বেনাপোলের মূল সড়ক যানজটমুক্ত করা এবং আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বন্দরের লিংক রোড ১ ও ২ চালু করে ৯ থেকে ৩৬টি পণ্য চালানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়া বেনাপাস সফটওয়্যার উদ্ভাবন, অনলাইনে ই-নিলামের প্রস্তুতি সম্পন্ন, কেমিক্যাল টেস্টের জন্য রমন স্পেকট্রোমিটার স্থাপন এবং মেনিফেস্টে ‘ডি’ চিহ্নিত করে পণ্য চালান দ্রুত শুল্কায়ন করে খালাস করা হয়। শুল্কায়ন গ্রুপ ভেঙে ছয়টি থেকে ৯টিতে উন্নীতকরণ, শুল্কায়ন সময় হ্রাসে ফ্লোল্ডার সিস্টেম চালু, শুল্কায়নের গতি মনিটরিং, গ্রিন আমদানিকারকের চালান ‘উ’ মার্ক করে দিনে দিনে খালাসের পদক্ষেপ নিয়ে আনস্টাফিং শাখা গঠনসহ চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি উদ্ঘাটনে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে।

ফলে এসব সেবা পুরোপুরি চালু হলে বন্দরের রাজস্ব আরও বাড়বে। তিনি বলেন, গত দু’বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য চালান দ্রুত খালাস ও শুল্কায়ন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তনের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কাস্টমস কমিশনার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০