বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

অর্থসংকট সত্ত্বেও অনুমোদন পাচ্ছে নতুন প্রকল্প

মাসুম বিল্লাহ: গত ২০ মে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ৬৭৭টি। কিন্তু করোনার কারণে এবার প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ অর্থের জোগানও সীমিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান প্রকল্পগুলোয় অর্থের সংকট থাকা সত্ত্বেও নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ৮ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করে অর্থবিভাগ। এতে সীমিত সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোকে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন অগ্রাধিকারের শ্রেণিকরণে বিভাজন করা হয়। এর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলোয় অর্থছাড় স্বাভাবিক থাকবে। আর মধ্য অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলোয় যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী, কেবল সেসব খাতেই অর্থ ব্যয় করা যাবে। আর যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা জরুরি নয়, সেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। এছাড়া নিম্ন অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোয় অর্থছাড় স্থগিত থাকবে।

মূলত অর্থের জোগান কম থাকায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যেই অনেকগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েই চলেছে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে গত জুলাই থেকে চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ৯টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় ৫০টির অধিক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। গত মঙ্গলবার এক হাজার ২৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়-সংবলিত পাঁচটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন পায় ৫৩৪ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প। ১৪ জুলাই অনুমোদন পায় ১০ হাজার ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে আট প্রকল্প। ২১ জুলাই অনুমোদন পায় ছয়টি প্রকল্প। যেগুলোয় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। ২৮ জুলাই অনুমোদন পায় তিন হাজার ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়-সংবলিত সাত প্রকল্প। ১৮ আগস্ট অনুমোদন পায় তিন হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ের সাত প্রকল্প। ২৫ আগস্ট অনুমোদন পায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পাঁচ প্রকল্প।

অনুমোটিত এসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন এসব প্রকল্পে অর্থায়নের প্রয়োজন পড়বে। চলমান প্রকল্পগুলোয় যেখানে অর্থায়ন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে, সেখানে নতুন নতুন প্রকল্পে কীভাবে অর্থায়ন নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে নতুন প্রকল্পগুলো আরএডিপিতে যুক্ত হলেও তখন এগুলোয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে, সমস্যা হবে না।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, যেসব প্রকল্পে অর্থছাড় বন্ধ রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে এবং ব্যয়ও বাড়বে।

এদিকে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যেখানে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে, সেখানে নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলে তা এডিপি বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প বিভাজন ভালো উদ্যোগ। এতে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন গতি পাবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া না গেলে সেগুলোর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে। ফলে তা থেকে কাক্সিক্ষত রিটার্ন পাওয়া যাবে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো এই মুহূর্তে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে, এটা ঠিক। কিন্তু আরএডিপিতে সেগুলো স্থান পাবে। আর সে সময়ে যদি অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে এগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০